শিশুর মানসিক বিকাশ পুরোপুরি নির্ভর করে মায়ের ওপর। মা যদি সন্তান লালন-পালনে বিজ্ঞানসম্মত আচরণ করেন, তবেই সুফল পাওয়া যাবে। রাজশাহী ও নাটোরের এক হাজার ৩৩৫ মা ও শিশুর ওপর গবেষণায় এমন তথ্য মিলেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীতে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সূচনা ফাউন্ডেশন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আট বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হয়। কিন্তু এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৩৮ ভাগ শিশুর ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। কেন হয় না, সেটা খুঁজে দেখেছে সূচনা ফাউন্ডেশন।
শিশুর বিকাশ নিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ৫৯১ জন মাকে দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। গর্ভাবস্থায় ৪টি এবং শিশু জন্মের পর ১৮ মাস পর্যন্ত ১২টি প্রশিক্ষণ পান তাঁরা। অন্যদিকে, নাটোরের লালপুরের ৭৪৪ মাকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। যারা এই গবেষণার অংশ ছিলেন।
গবেষণায় দেখানো হয়েছে, প্রশিক্ষণ পাওয়া মায়ের সন্তানেরা যোগাযোগ দক্ষতা, চলাচল ও সমস্যা সমাধানসহ পাঁচটি সূচকে এগিয়ে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিশুদের মায়েদের যদি আমরা জন্মের পূর্বেই গর্ভবতী অবস্থায় এবং শিশুর জন্মের পর বিজ্ঞান সমৃদ্ধ মডিউল অনুযায়ী কয়েকটি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি, তাহলে দেখতে পাই শিশুর সকল পর্যায়ের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ থেকে শুরু করে নানা ধরনের বিকাশ উন্নততর হয়। এর ফলে শিশুর লেখাপড়ার মান ভালো হতে পারে এবং সে একজন উৎপাদনশীল যোগ্য নাগরিক হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সাইদুর রহমান মাশরেকী বলেন, ‘একজন শিশু বড় হয়ে কেমন পারফরমার হবে সেটার জন্য ইতিবাচক পরিবেশে বাচ্চাকে বড় করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পজিটিভ, পাওয়ারফুল, ডিসিশন মেকিং নাগরিক যদি আমি পেতে চাই, তাহলে পাঁচ বছরের নিচ থেকে শিশুকে গড়ে তুলতে হবে।’
শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশকে বলা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এই সময়টি সবাইকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা যদি ফলাফলকে আমলে নিয়ে একযোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্মিলিত পদক্ষেপ নেই, সারা দেশে কাজটির প্রয়োগিক পরিবেশ তৈরি করতে পারি, তাহলে শিশুর বুদ্ধিবিকাশে তা ফলপ্রসূ হতে পারে।’
গবেষকেরা বলছেন, শিশুর শৈশবের ওপরই নির্ভর করে সারা জীবনের সমৃদ্ধি।