করোনাকালে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৭৫ ভাগকে বিনাপ্রয়োজনে দেওয়া হয়েছিল অ্যান্টিবায়োটিক। এমন তথ্য মিলেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায়। এদিকে, ঔষধ প্রশাসনের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনাকালে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ে দ্বিগুণের বেশি। যে ধারা থেকে এখনও বের হতে পারেনি দেশ।
২০২০ সালে করোনা মহামারির কবলে পড়ে গোটা বিশ্ব। আক্রান্ত হয় বাংলাদেশও। ছড়ায় আতঙ্ক। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় নানা ওষুধ দিয়ে চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
করোনাকালে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার জানতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর মেডিকেলে ভর্তি তিন হাজার ৬৯৩ রোগীর ওপর চলে গবেষণা। এতে দেখা যায়, ৯৪ ভাগ রোগীকেই দেওয়া হয় অ্যান্টিবায়োটিক। অথচ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ছিল মাত্র ১৯ ভাগের। অর্থাৎ ৭৫ ভাগ রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।
বিএসএমএমইউর ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘যারা ভর্তি হননি, তারাও আসলে ঘরে বসে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছেন। এমনকি যারা করোনায় আক্রান্ত হননি, তারাও ঘরে বসে গ্রহণ করেন অ্যান্টিবায়োটিক। বলা যেতে পারে, শুধু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরাই অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছেন এমন নয়, বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গেছে।’
সবচেয়ে বেশি ৮৫ ভাগ ব্যবহার হয়েছে সেফটিয়াক্সন, কো-অ্যামক্সিক্লাভ, এজিথ্রোমাইসিন ও মেরুপেনাম। সংক্রমণ সারাতে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে এগুলো অন্যতম। এগুলোর ব্যবহার বাড়ায় জীবাণুর বিরুদ্ধে বেড়েছে রেজিস্ট্যান্স।
অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘কোভিডের ওই বছরটাতে সারা দেশেই এভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার ফলে এখন জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কমে গেছে। এখন আর ঠিকমতো কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক। এর মধ্য দিয়ে সংকটের পথে যাচ্ছে দেশ। দ্রুত এই সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান না করলে একসময় নাগালের বাইরে চলে যাবে।’
করোনার আগে দেশে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ছিল ২৫ শতাংশ। করোনাকালে তা বেড়ে হয় ৫৮। বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারকারী দেশের শীর্ষ তিনে বাংলাদেশ।