ইঁদুরের ত্বকে একটি বিশেষ রঙ প্রবেশ করালে ত্বক স্বচ্ছ হয়ে যায় এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যায়। চমকপ্রদ এই আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকেরা। সম্প্রতি সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ওই রংটি ব্যবহারের মাধ্যমে ইঁদুরের অঙ্গপ্রতঙ্গগুলোর কার্যক্রম ও গঠন পর্যবেক্ষণ করা যায়।
এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জীববৈজ্ঞানিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করতে পারবেন এবং গবেষণায় আরও অগ্রগতি আনতে পারবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পদ্ধতিতে প্রাণীদের কষ্ট বা মৃত্যুর ঝুঁকি ছাড়াই গবেষণা করার সুযোগ দেবে।
কোনো জীবন্ত প্রাণীর ত্বকের মধ্য দিয়ে খালি চোখে কিছু দেখা সম্ভব নয়। ত্বকের প্রোটিন ও চর্বির মতো উপাদানগুলোর কারণে ত্বকে আলোক বিচ্ছুরিত হয়। যার কারণে ত্বক কার্যত অস্বচ্ছ থাকে। তবে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা টারট্রাজিন নামে পরিচিত একটি ফুড কালার আবিষ্কার করেছেন। এই রঙ ‘ইয়েলো ডাই ৫’ নামেও পরিচিত। এটি আলোর বিচ্ছুরণ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে দাবি গবেষকদের।
ডালাসের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক জিহাও ওউ এ গবেষণার প্রধান লেখক। তিনি বলেন, ‘যারা মৌলিক পদার্থবিদ্যা বোঝেন তাদের জন্য এ গবেষণা যৌক্তিক। কিন্তু যারা এর সঙ্গে পরিচিত নন, তাদের কাছে এটি জাদুর মতো মনে হবে।’
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ডা. গুওসোং হং বলেন, ‘এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিরাগুলোকে আরও দৃশ্যমান করবে, লেজার-ভিত্তিক ট্যাটু অপসারণকে আরও সহজ করে তুলবে এবং ক্যান্সারের প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, এই রঙ বিশেষভাবে অতি বেগুনি রশ্মি এবং নীল আলোর তরঙ্গ শোষণ করে। এর ফলে লাল এবং কমলা রঙের আলো ইঁদুরের টিস্যুর গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এটি ইঁদুরের ত্বককে স্বচ্ছ করে তোলে। পরবর্তীতে রঙটি ধুয়ে ফেললে এই প্রভাব চলে যায়।
ইঁদুরের পেটে এই রঙ প্রয়োগ করে ইঁদুরের অন্ত্রের গতিপ্রকৃতি দেখতে পেয়েছেন গবেষকরা। এটি প্রয়োগ করার কারণে ফ্লুরোসেন্ট মার্কার দিয়ে ট্যাগ করা নিউরনগুলোকে বাস্তব সময়ে কাজ করতে দেখা গেছে। এই পদ্ধতি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের (আইবিএস) মতো হজমজনিত সমস্যাগুলো বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া ইঁদুরের মাথার খুলিতে রঙ প্রয়োগ করে মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোর কার্যক্রম এবং ইঁদুরের পেছনের পায়ে প্রয়োগ করে পেশীগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকেরা।
চমকপ্রদ এমন আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের গবেষণার স্বার্থে আরও বিভিন্ন প্রাণীর ওপর এটি প্রয়োগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণাটি সম্পর্কে ক্রিস্টোফার জে. রোল্যান্ডস এবং জন গোরেস্কি লিখেছেন, জেব্রা ফিশ এবং নিমাটোড প্রায়ই গবেষণার জন্য বাছাই করা হয়। কারণ তাদের ত্বক স্বচ্ছ হওয়ায় শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলো দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। তবে নতুন এ রঙ প্রয়োগ পদ্ধতি সাময়িকভাবে প্রাণীর ত্বককে স্বচ্ছ করে দেওয়ার কারণে প্রাণীগুলোর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে গবেষকদের বড় সুযোগ করে দিতে পারে।