আমাদের দেহে এমন একটি অঙ্গ রয়েছে, যা গোপনে অ্যান্টিবডির কাজ করে। এতদিন আমরা এটা জানতামই না। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় থাকা এই অংশ ‘কার্যকর অ্যান্টিবডির খনি’।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ইসরায়েলের গবেষকেরা এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এই অংশ নিয়মিত প্রোটিন রিসাইকেল করতে পারে। তবে তা করে একদম গোপনে। এই অঙ্গ দেহে প্রবেশ করা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে, যে ব্যাপারে এতদিন আমরা জানতামই না।
এই আবিষ্কার এখন মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে আমরা যেসব ওষুধ খেয়ে থাকি, সেগুলো আরও কমানোর চিন্তাও করা যাবে।
ইসরায়েলের গবেষকেরা বলছেন, এই ক্ষুদ্রাঙ্গ কোষের ভেতরে থাকা প্রোটোজমের কেন্দ্রে থাকে। এর প্রধান কাজ হচ্ছে, প্রোটিনকে ছোট করে কাটা। আর সেসব ছোট প্রোটিন থেকে আবার নতুন করে প্রোটিন উৎপাদন করা সম্ভব। নেচার জার্নালে সম্প্রতি এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়।
ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের গবেষক অধ্যাপক ইয়াত মার্বল বলছেন, ‘এটা একটা যুগান্তকারী ঘটনা। আমরা নতুন এক মেকানিজম পেলাম। এটা দিয়ে ব্যাকটেরিয়া খতম করা যাবে। আমাদের দেহের প্রতিটি কোষেই এটি রয়েছে। আর এর মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে নিয়মিত নতুন করে প্রোটিন তৈরি হচ্ছে।’
এসব প্রোটিন নিয়ে পরে ইঁদুরের ওপর চালানো হয়েছে গবেষণা। এরপর যে ফলাফল এসেছে, তা অবাক করে দেওয়ার মতো। বাজারের চিরায়ত অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে এই অংশ বেশি কার্যকরভাবে ব্যাকটেরিয়া মারতে পারে। আর এসব অংশ থাকা প্রোটোজম যখন অক্ষম করে দেওয়া হয়, তখন খুব দ্রুত সেই কোষকে স্যালমোনেলাসহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত করতে পারে।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের জীবন বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও ইমিউনোলজিস্ট অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডেভিস বলেছেন, ‘এই গবেষণার ফলাফল দারুণ তথ্য নিয়ে এসেছে। ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে নতুন দিকপাল পাওয়া গেল।’
এ নিয়ে এখনো বিস্তর গবেষণা বাকি। তবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে পারলে করোনার মতো জটিল রোগ প্রতিরোধ করা যাবে।