ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ স্টোর চালু করেছে দেশীয় সুগন্ধি ব্র্যান্ড জোনাকি ফ্রাগ্রেন্স। নিজস্ব সৌরভগুলোকে দেশি-বিদেশি মানুষের কাছে উপস্থাপন করার লক্ষ্যেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে প্রথম আউলেট চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালে চালু হলেও এতদিন শুধুমাত্র সুপারশপ ও অনলাইনে পাওয়া যেত ব্র্যান্ডটি। এবার নিজস্ব স্টোরে মিলবে তাদের সকল পণ্য।
দেশের প্রথম ফাইন ফ্রেগ্রেন্স ব্র্যান্ড জোনাকি ফ্রাগ্রেন্স। এই সুগন্ধি ব্র্যান্ড ২০২০ সালে নিয়ে আসেন সিনিয়ার ইন্টিরিয়র ডিজাইনার ও প্রতিষ্ঠানটির সত্তাধিকারী নাসরিন জামির। এরপর তিনি যোগ করেন সৌন্দর্যপণ্য ও আতর। দেশীয় ফুল থেকে তৈরি বিশ্বমানের সুগন্ধি জোনাকি এতদিন পাওয়া যেত পারফিউম বাংলাদেশ, ঢালি, ইউনিমার্ট ও আলমাসের পারফিউম কর্নারে। এছাড়া তাদের ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়াতে অর্ডার করার সুযোগ ছিল ব্র্যান্ডটির। এবার ঢাকার পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জোনাকি খুলেছে তাদের প্রথম ফ্ল্যাগশিপ স্টোরর।
নাসরীন জামির জানান, তিন বছরের সুগন্ধি সংক্রান্ত গবেষণা, পারফিউমের সৌরভ নির্ধারণ শেষে চার বছর আগে শুরু করেন জোনাকি ফ্রাগ্রেন্সে। পারফিউম নিয়ে পথা চলা শুরু হলেও ব্র্যান্ডে ধীরে ধীরে যোগ হয়েছে বিউটি, জুয়েলারি লাইন ও আতর। জোনাকিতে আছে মেয়েদের জন্য ৩টি সৌরভ–নেরোলি ব্লসম, ফ্রেসিয়া নাইটস আর ওরিয়েন্টাল জেসমিন। আর ছেলেদের জন্য আমারেত্তো ও স্যান্টাল টাবাক–এই ২টি সৌরভ। ‘জয় অব লাইট’ ট্যাগলাইনের জোনাকির শুরুটি হয়েছিল এই ৫টি ফ্রাগ্রেন্স রেঞ্জ দিয়ে। বাংলাদেশের সাদাফুলের ঘ্রাণ মোহনীয়। দোলনচাঁপা, বেলি, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, জুঁই- ৫টি সাদাফুল থেকে অণুপ্রাণিত হয়েই পারফিউমগুলো ডিজাইন করা হয়েছে।
পরবর্তীতে বিউটি প্রোডাক্টস হিসেবে জোনাকিতে যোগ হয় লিপস্টিক, কমপ্যাক্ট পাউডার ও জেল আইলাইনার। এখন অব্দি দীর্ঘস্থায়ী ৭টি শেডের স্যাটিন ম্যাট ও ৬টি শেডের সেমি গ্লস লিপস্টিক আছে জোনাকিতে। এই লিপস্টিকগুলো সববয়সীদের ব্যবহার উপযোগী, ট্রেন্ডি ও যেকোনো স্কিন টোনের জন্য মানানসই। কমপ্যাক্ট পাউডার আছে তিনটি শেডের। লাইট, ওয়ার্ম বেইজ ও গোল্ডেন হানি। কমপ্যাক্ট পাউডারগুলোতে আছে এসপিএফ-২০ যা ত্বককে দেবে সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা।
জোনাকির সৌরভ আরও বাড়িয়েছে সর্বশেষ সংযোজিত ৪টি আতর। হাজার বছর পুরনো আতর কোন অ্যালকোহল ছাড়াই বানানো হয় বলে সম্পূর্ণ হালাল এই সুগন্ধি। এক ফোঁটা তরলের সুগন্ধ থাকবে সারাদিন। জোনাকিতে আছে নূর আল হায়া (গোলাপের সুভাস), রয়াল আউদ (মাস্কি, উডি ও স্পাইসি দারুণ সংমিশ্রণ), মুখালাত সুফি (গোলাপ, অ্যাম্বার ও আউদের অভিনব সংমিশ্রণ) ও মাস্ক মাঘরিবি (উডি ও আর্থি অ্যারমা)। ফুল, ভেষজ, মসলা ও কাঠ থেকে তৈরি এই আতরগুলোর আছে থেরাপিউটিক গুণও। নিজের ভাবনাকে বাস্তবায়ন করেন নিজের স্টুডিওতে। তারপর চলে যান মালয়েশিয়ায়। সেখানেই তৈরি হয় সুগন্ধি। সেখানে বোতলজাত হয়ে আসে বাংলাদেশে। বিদেশে তৈরি হলেও শতভাগ বাংলাদেশি পণ্য বলছেন নাসরীন জামির। কারণ পারফিউমের সৌরভ বাছাই ছাড়াও মোড়ক, লেবেলিং সব তাঁর নিজের নকশা করা।
ব্র্যান্ডটিতে রয়েছে ‘ফ্রেসিয়া নাইট’ হালকা পারফিউম। ফ্রেসিয়া, গোলাপ, শাপলা, কস্তুরীরমতো উপাদান আছে এতে। সারাদিন সতেজ একটা ঘ্রাণ ছড়ায় এটা। ‘নেরোলি ব্লোসোম’ হলো সিট্রাস আর ফ্লোরাল ফ্রাগ্রেন্সের সংমিশ্রণ। বাংলাদেশে তো এখন গরমকালটাই বেশি থাকে, এই আবহাওয়ার জন্য ফ্রেশ একটা পারফিউম এটা। ফুলেল সুভাস ও লেবু গাছ ঘেরা কোনো বাগানের মধ্যে বসে থাকার মতো আবহ পাওয়া যায় নেরোলি ব্লোসোমের ঘ্রাণে। ‘ওরিয়েন্টাল জেসমিন’তে আছে জেসমিন আর গোলাপ। অনেকটাই বেলি ফুলের মতো গন্ধ এটার। আমরা বাঙালিরা বেলি ফুল ছাড়া বর্ষার কথা চিন্তাও করতে পারিনা। সবচেয়ে বেশিক্ষণ এটার ঘ্রাণ থাকে। সেন্ট টাইপ হলো ফ্লোরাল আর উডি।
ছেলেদের পারফিউমের জন্য আমাকে অনেক স্টাডি করতে হয়েছে, বলেছেন নাসরিন জামির। আরও জানালেন, আমারেত্তো আমরা বানিয়েছি ক্যাজুয়াল ওয়্যারের জন্য। সারাদিন ব্যবহারের মতো লাইভলি আর রোমান্টিক সেন্ট এটা। অন্যদিকে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পারফিউম স্যান্টাল টাবাক। চন্দন কাঠের একটা সুগন্ধ আছে আবার তামাকের মতোও গন্ধ আছে, একই সঙ্গে আছে ল্যাভেন্ডার আর মাস্কও। ফলে এতে মেলে জঙ্গলের আবহ আছে। ইন্টারকন্টিনেন্টালে জোনাকির এই শপে আছে তাঁর ডিজাইন করা ফাইন কটন ও মসলিনের স্কার্ফ ও কাঠের তৈরি ওয়াল হ্যাঙ্গিং। মুক্তার মালাও আছে। জোনাকি ফ্রাগ্রেন্স ৪ বছরের পথচলায় গ্রাহকদের কাছ থেকে সন্তোষজনক সাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাসরিন জামির। বিশেষ করে অনলাইনে। তবে নিজের পছন্দের জায়গা নিয়ে কাজ করতে পারছেন বলে সন্তুষ্ট তিনি। প্রবাসী বাঙালিরাও জোনাকি ব্র্যান্ডের ওপর ভরসা করছেন। এখন তো ইন্টারকন্টিনেন্টালে আসা দেশ-বিদেশের সবাই জানবে জোনাকিকে।
বিশ্বমানের পারফিউম ব্র্যান্ড হিসেবে জোনাকিকে গড়ে তুলতে আশাবাদী নাসরিন জামির বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশেও একদিন উন্নতমানের পারফিউম বানানোর মতো ল্যাব তৈরি হবে। তখন আর বাইরে যেতে হবে না। ডিজাইন থেকে প্যাকেজিং সব আমাদের দেশেই হবে। আমি ভীষণ আশাবাদী। দেশে একটা কেমিক্যাল ল্যাব হবে, কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি হবে, সেখানে আমরা কাজ করতে পারব। আর আমি সেই স্বপ্ন দেখি।