আজকের দিনে কিশোর-কিশোরীদের ইনস্টাগ্রাম থেকে দূরে রাখা বেশ কঠিন কাজ। চারপাশে সবাই আছে, বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত থাকার চাপও কম নয়। ‘সবাই আছে, শুধু আমি নেই কেন?’, ‘আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই?’, ‘তোমার চাইলে আমার অ্যাকাউন্ট দেখতেই পারো’, এ রকম কথাগুলো অনেক অভিভাবকই শুনেছেন সন্তানদের মুখে। শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ বাবা-মা রাজি হয়ে যান। এটা তাদের অবহেলা নয়, বরং এই না বলাটা চিরদিন টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব বলেই মেনে নেন। অনেক সময় সন্তানের প্রতি আস্থা প্রকাশ করাও এর একটা কারণ।
কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, আপনি কি তার সঙ্গে কথা বলছেন অনলাইন নিরাপত্তা, আত্মপরিচয় আর স্ক্রিন টাইম নিয়ে?
সোশ্যাল মিডিয়া খারাপ নয়, তবে কিশোরদের জন্য এর আলাদা কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। ইনস্টাগ্রাম খুব সহজে ‘লাইক’, ‘ফলোয়ার’ আর ফিল্টারের মাধ্যমে পরিচিতি তৈরি করে। তা ধীরে ধীরে প্রভাব ফেলে একজন কিশোর কীভাবে নিজেকে দেখে। জনপ্রিয়তা সেখানে রূপ নেয় সংখ্যায়। আর এই স্বীকৃতি পাওয়ার তাগিদ একধরনের আসক্তিতে পরিণত হয়। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে ছবি পোস্ট, আর পরদিন সেই ছবিতে কে লাইক দিল না, কে কমেন্ট করল না, স্টোরিতে কে ট্যাগ করল না, এই নিয়ে মন খারাপ শুরু।
আরেকটা ব্যাপার হলো, সোশ্যাল মিডিয়ায় সংযুক্ত থাকার অনুভূতি থাকলেও বাস্তব যোগাযোগ অনেক সময় কমে যায়। এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথোপকথন হলেও, সামনাসামনি ঠিকমতো কথা বলার অভ্যাস কমে যাচ্ছে। বাস্তব আর ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের সীমারেখা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। নিজের মত প্রকাশের জায়গায় তৈরি হচ্ছে অন্যদের মতো হয়ে ওঠার চাপ।
এই পরিস্থিতিতে ইনস্টাগ্রামের কিছু নতুন পদক্ষেপ যেমন, অটো প্রাইভেট অ্যাকাউন্ট, অপরিচিতদের বার্তা আসা বন্ধ কিছুটা স্বস্তি দেয়। কিন্তু প্রযুক্তির কোনো সেটিংই বাবা-মায়ের সঙ্গে হওয়া একটি খোলামেলা কথোপকথনের বিকল্প হতে পারে না।
সন্তানকে বলুন, শুধু অপরিচিতদের ঝুঁকি নিয়েই নয়। বরং বোঝান, তাদের আত্ম-মূল্য নির্ভর করে না লাইক বা ফলোয়ারের ওপর। অনলাইনে দেখা যাওয়া মানেই সবসময় ভালোবাসা পাওয়া নয়। তাদের মনে করিয়ে দিন, সবসময় ‘অন’ থাকা জরুরি নয়। জীবন সবসময় ফিল্টার দিয়ে সাজিয়ে তোলার কিছু নয়। আসল সম্পর্ক তৈরি হয় ফিল্টারহীন বাস্তবতায়।
হয়তো তারা আপনার কথা শুনে চোখ ঘোরাবে, পাত্তা দেবে না। কিন্তু তারা আপনার কথা শুনছে। সেই কথাগুলো হয়তো একদিন হবে তাদের ভরসার জায়গা। যখন ভার্চুয়াল জগতের হাওয়ায় টিকে থাকার লড়াইটা কঠিন হয়ে উঠবে।