পর্যটকদের কাছে শিমুল বাগানের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ঘোড়া। এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের দেখলেই ঘোড়া নিয়ে হাজির হয়ে যায় খুদে গাইড। ঘোড়ায় চড়িয়ে পয়সা কামাই করে তারা। কারও বয়স ১০, কারও বা ১২। মজার বিষয় হলো এখানে সবগুলো ঘোড়ার গায়ের রঙ সাদা।
সুনামগঞ্জে তাহিরপুরের বাদাঘাটের মানিগাঁও গ্রামে জয়নাল আবেদীনের এই শিমুল বাগান এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় হিসেবে পরিচিত। এই বাগান ঘুরতে প্রতিদিন আসে শতশত পর্যটক। বাগানে রয়েছে ঘোড়ায় চড়ে বাড়তি আনন্দ পাওয়ার ব্যবস্থা। ২০১৬ সালে বাগান হওয়ার আগে এসব ঘোড়া ব্যবহার হতো বাদাঘাট থেকে টিলা পর্যন্ত মালামাল টানার কাজে। ঘোড়ার গাড়ি চলতো তখন।
উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষেরা এসব ঘোড়া দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ৩০/৩৫টি ঘোড়া আছে ওই ইউনিয়নে। সবগুলো ঘোড়া চলে এখন শিমুল বাগানে। শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়স্করা পর্যটকদের জন্য ঘোড়া নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। বাগানের গেইট দিয়ে নতুন লোকজন ঢুকতে দেখলেই ঘোড়া নিয়ে এগিয়ে যায় সবাই। ঘোড়ায় উঠতে পীড়াপীড়ি করতে থাকে। পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে যা আয় হয় এর বড় অংশ দিন শেষে বুঝে নেয় ঘোড়ার মালিকরা।
১০ বছর বয়সী লাকাব দুই ভাই-এক বোনের মধ্যে বড়। ঘোড়া নিয়ে প্রতিদিন সকালে চলে আসে শিমুল বাগানে। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বাগানেই থাকে ঘোড়া নিয়ে।
লাকাব কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে বারবারই তার ঘোড়ায় চড়তে বলছিল- ‘ভাই উডো।’ কথার ফাঁকে সে বলছিল, ‘ঘোড়ার মধ্যে মানুষ উডে আমরা ঘুরাই। বাগানের এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে একশো টাকা নেই সাওয়ারী পিছু। পাঁচশো টাকা পেলে ঘোড়ার মালিক নেয় সাড়ে তিনশো। আমার দেড়শো থাকবে।’
বাগানে থাকা ঘোড়ার মালিক মুছা মিয়া ও মঞ্জুর আলী জানান, একটি ঘোড়ার খাবারের জন্য দুশো থেকে আড়াইশো টাকা খরচ রয়েছে প্রতিদিন। হাজার-বারোশো টাকা আয় হয় একেকটি ঘোড়া থেকে।
শিমুল বাগানে যে ঘোড়াগুলো চোখে পড়ে তার সবই সাদা। এ ব্যাপারে মঞ্জুর আর মুসা মিয়ার ভাষ্য, ‘এহানো সাদা ছাড়া চলে না। সাদাডার ছবি ক্লিয়ার আইয়ে, সুন্দর আইয়ে।’
যোগাযোগ ব্যবস্থার দূরাবস্থার মধ্যেও প্রতিদিন দুই–আড়াই হাজার লোক এই বাগানে বেড়াতে আসে বলে জানায় স্থানীয়রা। পর্যটন স্পট সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। সেখানেও সাদা ঘোড়ার কদর।
ধলাই নদী। পাথর বাহিত এই নদীর পাড় থেকে নৌকা ঘাট পর্যন্ত ঘোড়ায় চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে পর্যটকদের জন্যে। ঘোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী কালাইরাগ, খোলাবাড়ি ও ভোলাগঞ্জ গ্রামের মানুষরাই এখানে ঘোড়া চালনা করে আসছে পর্যটকদের জন্য। সিলেটের অন্যতম এই পর্যটন স্পটেও ২৫/৩০টি ঘোড়া রয়েছে, যার বেশীর ভাগের রং সাদা। সাদা পর্যটকদের পছন্দ।’
সিরাজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘সবাই সাদাডাই খোঁজে। এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয় প্রতিদিন একেকটি ঘোড়া থেকে। ছোট হলে দু’জন আর বড় মানুষ হলে একজন করে যাত্রী নিই ঘোড়ায়। নদীর পাড় থেকে নৌকাঘাট পর্যন্ত একজনের ঘোড়ায় চড়ার ভাড়া ১’শ টাকা। পর্যটকরা এলে ধোলায় হাঁটা যায় না। সেজন্যে আমরা নিজেরার টাকায় এই রাস্তায় পানি মারাই (ছিটাই), যাতে ধুলা না ওড়ে।’