ঝর্ণা আর পাহাড় দেখতে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে হাজারো পর্যটক যায় ভারতের মেঘালয়ে। বর্তমানে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় ঝর্ণা দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। মেঘালয়ের সে শূণ্যতা পুরোটা পূরণ করতে না পারলেও, মোটেও হতাশ করবে না রাঙামাটির প্রকৃতি।
মৌসুমের এই সময়টাতে রাঙামাটিকে মেঘালয়ের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না। প্রতিটি ঋতুতে যেন নতুন করে সেজে ওঠে তার প্রকৃতি, যা মেঘালয়কেও হার মানাবে। রাঙামাটি হয়ে ওঠে প্রকৃতির রাণী। প্রকৃতি সকালে এক রকম, দুপুরে অন্য। আর বিকেলে অপূর্ব আভা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
শীতে যারা পাহাড় ভ্রমণে যান, তারা আসলে পাহাড়ের প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন না। পাহাড় ভ্রমণের উপযুক্ত সময় আসলে বর্ষাকাল। এ সময়টিতে পাহাড় যেন ফিরে পায় তার যৌবন। চারপাশ শুধু সবুজ আর সবুজ। আর ঝর্ণাগুলোও ফিরে আসে তার নিজস্ব ছন্দে। নির্জন দুপরে দূর থেকেই শুনতে পাবেন ঝর্ণা থেকে আছড়ে পড়া কলকল পানির শব্দ।
তাই তো বর্ষাকালই পাহাড়ের প্রকৃতি দেখার উপযুক্ত সময়। শুধু তাই নয়, এই সময়টাতে পাহাড়ে মিলবে হরেক রকম খাবার। যার মধ্যে থাকছে সবজি, ফল-ফলাদি, বন থেকে সংগ্রহ করা সুস্বাদু লতাপাতা আর বুনো ফল। যা আপনি টাকা দিয়েও কোথাও পাবেন না।
শুধু প্রকৃতি নয়, মেঘালয়ের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসের সাথে অনেক মিল রয়েছে এখানকার আদিবাসীদেরও। চলতি বছরে কিছুটা আগেই বৃষ্টিপাত হওয়ায়, সবুজে ছেয়ে গেছে পাহাড়গুলো। এখন অনেকটা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া রয়েছে। আর সবচেয়ে ভালো দিক হলো, বিখ্যাত জুমের এখন ভরা মৌসুম। তাই তো জুমের সুগন্ধিযুক্তি সবজির সমাহার বাজারগুলোতে। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে সাজেক, কাপ্তাই ও রাঙামাটি শহর।
কী দেখবেন?
এখানে এলে দেখতে পাবেন ঝুলন্ত সেতু, সুবলং ঝর্ণা, রাজবন বিহার, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাজবন বিহার, আরন্যক, বার্গী লেক ভ্যালী, রান্যা টুগুন, জুমকিং ইকো রিস্টোর, বেড়ান্নে লেক শো, ইজোর, বড় গাং, রেং ইকো রিসোর্ট, গাং পাড় ইকো রিসোর্ট, রাঙা বেস ক্যাম্প, মায়াবী, নিলঞ্জনা রিসোর্ট ও রাঙাদ্বীপ।
এছাড়াও কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণ, পলওয়েল পার্ক, চিংম্রং বৌদ্ধ বিহার, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ সমাধি স্মৃতিসৌধ, পাহাড়ের, পাহাড়ের মেরিন ড্রাইভ খ্যাত আসামবস্তি কাপ্তাই সড়ক, ঝর্ণার দেশ বিলাইছড়িসহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান। আর রূপের রাণী সাজেক তো আছেই।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে যেতে পারেন রাঙামাটি। ঢাকা থেকে কলাবাগান, ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন শ্যামলী, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, ইউনিক, এস আলম, গ্রানলাইন কোম্পানি একাধিক এসি ননএসি বাস রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ঢাকা থেকে ৭/৮ ঘণ্টায় রাঙামাটি পৌঁছে বাসগুলো। ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা।
যারা এয়ারে আসতে চায়, তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেমে সেখানে থেকে কার নিয়ে সরাসরি রাঙামাটি আসতে পারবে। চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে প্রতি ২০ মিনিট পর পর বাস ছাড়ে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে।
কোথায় থাকবেন?
পর্যটনের শহরে থাকার জায়গার অভাব নেই। বিভিন্ন সরকারী ছুটিতে আবাসিক হোটেল মোটেল বিশেষ ছাড় ঘোষণা করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমন তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন হোটেল মোটেল পর্যটকদের জন্য বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছে। হোটেলের মান অনুযায়ী ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হতে পারে।