অমর একুশে বইমেলায় একটি স্টলের সামনে ‘হট্টগোলের’ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার নিজের ভেরিফাইড প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি মঙ্গলবার রাত ৯টা ৪২ মিনিটে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দিয়েছেন।
পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, তৌহিদী জনতাকে হুমকি দিতে নয়, সতর্ক করতে চেয়েছেন তিনি। আগের পোস্টে মব সংস্কৃতি নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে তৌহিদী জনতার প্রসঙ্গ টানেন এই উপদেষ্টা।
আজ রাতের পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেখেন, ‘তৌহিদী জনতা নামে আপনারা যারা নিজেদের পরিচয় দেন, তাদের আমি হুমকি দেইনি, সতর্ক করেছি। কেন করেছি? গত পনেরো বছর নিপীড়ন সহ্য করে এবং অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখে সকল নাগরিকদের মতোই আপনারা একটি জাতীয় সম্ভাবনা হাজির করেছেন। কিন্তু মব সংস্কৃতির কারণে তা ভুলণ্ঠিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনাদেরই এ সম্ভাবনা রক্ষা করতে হবে।’
‘আমার আপনাদের প্রতি ঘৃণা নেই, বরং বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের মতোই আপনাদের প্রতি দরদ আছে। আলেমদের প্রতি সম্মান আছে। আমি নিজে বিশ্বাসী মুসলিম হিসেবে তৌহিদবাদী। কিন্তু কেউ তৌহিদের নামে উগ্রতা দেখালে সেটার আসন্ন পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করাও সহনাগরিক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে আমার কর্তব্য মনে করেছি।’ যোগ করেন মাহফুজ আলম।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ লেখেন, ‘বাংলাদেশে এখন স্থিতিশীলতা দরকার। বিপ্লবী জনতা আর খণ্ড খণ্ড মব আলাদা জিনিস। লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যবিহীন এ মব সংস্কৃতির কারণে উপকৃত হচ্ছে আমাদের শত্রুরা। রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমাদের কঠোর হতে হবে।’
এ কঠোরতার হুঁশিয়ারি অপরাধীদের জন্য, যারা তৌহিদের কথা বলে নিপীড়ন করছে, নৈরাজ্য করছে। কিন্তু, আগে যেভাবে ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মুসলিমদের নিপীড়ন করা হতো, যার শিকার আমিও হয়েছি- তা কোনোমতেই আর পুনরাবৃত্ত হবে না।’ উল্লেখ করেন তিনি।
মাহফুজ আলম ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আলেম–উলামা, মাদরাসার ছাত্ররা গত ১৫ বছর নিপীড়নের স্বীকার হয়েছেন, এবারের অভ্যুত্থানেও রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু যে স্বাধীনতা এত রক্তাক্ত, সে স্বাধীনতা রক্ষায় প্রজ্ঞা না দেখালে যে জুলুম নেমে আসবে- এ সতর্কতা উচ্চারণ যদি ভুল হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমি জালিম বা মজলুম- দুইটা হওয়া থেকেই আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’
ফেসবুক পোস্টে ‘‘পুনশ্চ’’ শিরোনামে মাহফুজ আলম যোগ করেন, ‘ব্যক্তি আক্রমণ, ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে আক্রমণ বা সন্দেহ তৈরি, পরিবারের সদস্যদের হুমকি বা বেইজ্জতি ইত্যাদি কাজগুলো নবিজির (সা.) অনুসারী হিসেবে সবার পরিত্যাগ করা উচিত। চলুন, বিভাজন আর ঘৃণা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রকে সবার করে গড়ে তুলি। পরস্পর সম্মান ও মর্যাদার সম্পর্কই নূতন বাংলাদেশের ভিত্তি।’
প্রসঙ্গত, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিকে আহ্বান জানিয়ে সোমবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
মাহফুজ ফেসবুকে লেখেন, ‘অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করেন, আর যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল হিসাবে ট্রিট করা হবে। আজকের ঘটনার পর আর কোনো অনুরোধ করা হবে না। আপনাদের কাজ না, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা আরও লেখেন, ‘কথিত আন্দোলন আর মবের মহড়া আমরা এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করব। রাষ্ট্রকে অকার্যকর এবং ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করা হলে একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।’
ওই পোস্টে মাহফুজ আলম আরও লেখেন, ‘তৌহিদী জনতা! আপনারা দেড় দশক পরে শান্তিতে ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পেয়েছেন। আপনাদের আহমকি কিংবা উগ্রতা আপনাদের সে শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে যাচ্ছে। জুলুম করা থেকে বিরত থাকেন, নইলে আপনাদের উপর জুলুম অবধারিত হবে। ‘‘লা তাযলিমুনা ওলা তুযলামুনা’’- জুলুম করবেন না, জুলুমের শিকারও হবেন না। এটাই আপনাদের কাছে শেষ অনুরোধ!’