রাজনীতির কূটচাল যতই জটিল হোক না কেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জনগণই সবচেয়ে বড় শক্তি—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন মেনে নিতে পারেনি ভারত, যার ফলেই একের পর এক ইস্যু সৃষ্টি হচ্ছে।
দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। এই ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে শুরু হয় একপ্রকার উত্তেজনা ও অস্থিরতা।
ভারত কর্তৃক বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান বন্ধ, হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে অপপ্রচার, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা এবং সীমান্তে সংঘর্ষসহ একাধিক ঘটনা সেই উত্তেজনারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সম্প্রতি ব্যাংককে নরেন্দ্র মোদি ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত দেখা গেলেও তা ম্লান হয়ে যায় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল ও স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধের মাধ্যমে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. আমেনা মহসিন বলেন,‘ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা হঠাৎ করে প্রত্যাহার করা ঠিক হয়নি। যেহেতু এটি এমন একটি সময়ে ঘটেছে, যখন সম্পর্ক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে—তাই এটি উদ্বেগের বিষয়।’
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভারতের দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রনীতি আওয়ামী লীগকে ঘিরেই নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার পরিবর্তন হলে সেটি মেনে নেওয়াই হওয়া উচিত ভারতের পররাষ্ট্রনৈতিক সংস্কৃতির অংশ।
ড. আমেনা মহসিন আরও বলেন, ‘ভারতের পছন্দের সরকার সবসময় প্রতিবেশী দেশে থাকবে—এমনটি হতে পারে না। গণতন্ত্রে সরকার পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সেটি ভারতকে মেনে নিতে হবে।’
জাতীয় দৈনিক মানবজমিন–এর সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের মতের বাইরে কোনোদিন কোনো শক্তি কাজে আসে নাই। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেকে ভেবেছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব পাল্টে যাবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।’
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভবিষ্যতে দুই দেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানিয়ে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে হবে। আর এ জন্য ঢাকা ও দিল্লিকে আন্তরিক হতে হবে।