জুলাই অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে দেড় হাজার মামলা হলেও একটি বড় অংশই দায়ের করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। অভিযোগ উঠেছে, চাঁদাবাজি, দখল কিংবা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আসামি করা হচ্ছে ঢালাওভাবে। চলছে ধরপাকড়ও। অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে আরও সতর্ক হতে হবে। এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, ১০টি মেন্টরিং অ্যান্ড মনিটরিং দলের মাধ্যমে এসব মামলা তদারকি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ার বাইপাইলে ছাত্র আন্দোলনে আল আমিন নামের একজনকে নিহত দাবি করেন তাঁর স্ত্রী কুলসুম বেগম। গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার আদালতে মামলা করেন তিনি। এই মামলায় আসামি করা হয় শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটি নথিভুক্ত করে থানা। কিন্তু পাঁচ দিন পর, থানায় এসে হাজির হন আল আমিন নিজেই। তিনি জানান, স্ত্রী তাঁকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন। এরপর কুলসুম বেগমকে আটকের পর স্বীকার করেন, চাকরির লোভে মিথ্যা মামলা দায়েরে করেছেন তিনি।
এদিকে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রতিষ্ঠান দখল কিংবা নানা বিরোধের কারণে এমন অসংখ্য মামলা দায়ের হয়েছে। এর জেরে, গত ১৪ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলে, উদ্দেশ্যমূলক মামলা দায়ের ফৌজদারি অপরাধ। ঢালাও আসামি করে মামলা দিলে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। পরে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা নিয়ে কথা বলেন আইন উপদেষ্টাও।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এসব মামলা তদারকিতে ঢাকা, আট বিভাগ ও গাজীপুরে মেন্টরিং অ্যান্ড মনিটরিং দল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ‘মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য, হয়রানি করার জন্য, ভয় দেখানোর জন্য এগুলা ঘটছে। অপরাধটা হয়ত করেছেন পাঁচজন কিংবা দশজন সেখানে আরও ৩০০ জনের নাম দিয়ে মামলা হচ্ছে।’
আইজিপি আরও বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বলেছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলেছে, আমি নিজেও বলেছি এবং পুলিশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই নির্দেশ পেয়েছেন যে– নিরীহ লোককে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়।’
তবে থেমে নেই ধরপাকড়ের ঘটনা। অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে আরও সতর্ক হতে হবে। গ্রেপ্তারের আগে যাচাই-বাছাই করা জরুরি। মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা হুঁশিয়ারেই আটকে থাকলে চলবে না।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তোহিদুল হক বলেন, ‘যারা এ ধরনের হয়রানি উদ্দেশ্যমূলকভাবে, কোনো প্রলোভনে পড়ে করে থাকে তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনেন। এটি হলে অন্য যারা এ ধরনের মিথ্যা মামলা করছে তারা এগুলো থেকে দূরে থাকবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তত ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলাই ৫৯৯টি। এসব মামলায় আসামি ১০ হাজারের বেশি।