বহুল আলোচিত ২০০১ সালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাওলানা তাজ উদ্দিন ও শাহাদাত উল্লাহ জুয়েলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার অন্য আসামিদের ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নানের অপর এক মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির কারাগারে মৃত্যু হয়েছে। কাজেই তারা বাদ।
রায়ের পর রাষ্টপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবি জানিয়েছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির জানিয়েছেন, হাইকোর্টের এ রায় সঠিক হয়নি বলে মনে করি। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নয় বরং নৈতিক সাজা দিয়েছে আদালত। তাদের সাজা দেওয়া মোটেও সমীচীন হয়নি। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে উচ্চ আদালতে যাব।
এ মামলার আসামি মাওলানা তাজউদ্দিন পলাতক। বাকিরা কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে ৮ মে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য এদিন ঘোষণা করেন। ওইদিন আদালত জানিয়েছিলেন যে, রায় পড়া শেষ হবে মঙ্গলবার। ওইদিন আসামিদের সাজা বহাল থাকবে কিনা জানাবেন। ওইসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির ও এস এম শাজাহান।
এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ জুন বহুল আলোচিত এ মামলায় হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা তাজ উদ্দিনসহ ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন এ রায় দেন।
মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন-আকবর হোসেন, আরিফ হাসান, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান। তবে সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড এরইমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন- শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের ভোরে রমনার বটমূলে চলছিল ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। শত শত মানুষ যখন সুরের মুর্ছনায় আচ্ছন্ন তখনই জঙ্গি হামলায় সৃষ্টি হয় বিভিষীকাময় পরিস্থিতি। দূরনিয়ন্ত্রিত দুটি বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন ১০ জন, আহত হন অনেকে। এই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের জুনে হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনের যাবজ্জীবনের রায় দেন বিচারিক আদালত। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা।