রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা পাঠাতে জাতিসংঘের মানবিক করিডোর হতে পারে, যদি তা কার্যকর হয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি। মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাপানে আসন্ন পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা শেষে এ কথা বলেন তিনি।
রাখাইনে জাতিসংঘের করিডোর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাইদা শিনইচি জানান, এ বিষয়ে সব পক্ষের মত থাকতে হবে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রাখাইনে আমাদের কোনো রাষ্ট্রদূত যেতে পারে না। আমরা জাতিসংঘের উদ্যোগের বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। মানবিক করিডোর কাম্য, যদি তা কার্যকর ও টেকসই হয়।’
রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তীব্র সংঘাত চলছে। প্রদেশটির অধিকাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির কাছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সীমান্ত তাও নিয়ন্ত্রণ করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।
গত মার্চে বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাখাইনে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা চান। এর অংশ হিসেবে একটি মানবিক প্যাসেজ তৈরির প্রস্তাবও দেন তিনি।
এর মধ্যে গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বাংলাদেশ।
অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ রাজনৈতিক নেতারা।
অবশ্য সমালোচনার মুখে পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, রাখাইনে করিডোর দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয় নি সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এরমধ্যে গত ৪ মে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জানান, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে মানবিক সহায়তা করিডোর জন্য আমরা আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম। জাতিসংঘ এটি পরিচালনা করবে, এর মাধ্যমে ত্রাণ যাবে, খাদ্য যাবে, অস্ত্র নয়। এই যোগাযোগ রাখাইনে নিরাপদ পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।’
রাষ্ট্রদূত জানান, চলতি মাসে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরে, দুই দেশের শীর্ষ নেতার বৈঠক হবে। আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বিনিয়োগসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যু।
সাইদা শিনইচি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এ মাসের শেষ দিকে জাপান সফরে যাবেন। তখন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার। মেট্রোরেল প্রকল্পের দ্বিতীয়-তৃতীয় লাইনের কাজ শুরুর বিষয়ে আমরা আগ্রহী। দুই দেশের এফওসি-তে বিনিয়োগ, বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়নসহ আঞ্চলিক নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।’
এর আগে ১৫ মে টোকিওতে অনুষ্ঠিতব্য দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার সফরসূচির পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক নানা ইস্যুতে এফওসিতে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ-জাপানের ৬ষ্ঠ এফওসি-তে ঢাকার পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন নয়, নেতৃত্ব দেবেন মন্ত্রণালয়ের পূর্ব বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম।