পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় ভারত-বাংলাদেশ দুদেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেজন্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ বিশ্লেষকদের। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাণিজ্যিক সুবিধা ব্যাহত হলে শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুদেশের জনগণ। তবে বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার এলে সম্পর্ক অনেকটাই স্বাভাবিক হতে পারে বলে মত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। পণ্য-রপ্তানিতে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পরপরই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সূতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ। এর একমাস পরই স্থলপথে তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে ভারত।
তবে রাজনৈতিক টানাপড়েনের প্রভাব বাণিজ্যে পড়া মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার তো শেষ নেই। যার ফলে দুই দেশেরই ভোক্তা, ব্যবসায়ী, রপ্তানি ও আমদানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং অর্থনৈতিক ও মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে অগ্রসর হওয়াটাই ভালো হবে।’
সেজন্য মুখোমুখি অবস্থানে না থেকে আলোচনার টেবিলে বসার পরামর্শ অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন দুদেশের তরফ থেকে অশুল্ক বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ হচ্ছে তা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা উচিত। আমাদের মূল যেটা, সেটা হচ্ছে আমাদের দেশের জন্য কোনটা ভালো হবে। আমাদের জন্য দুই দেশের ইতিবাচক সম্পর্কই ভালো হবে। এটা কীভাবে মর্যাদা সম্পন্নভাবে করা যায় সেটাই আসল বিবেচ্য হওয়া উচিত।’
স্বাধীনতার পর সীমান্ত হত্যা, ফারাক্কাসহ নানা ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের ওঠা-নামা হয় বেশ কয়েক দফায়। সেজন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে দুদেশের জনগণকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার আসলে সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হবে—ভারতের তরফ থেকে এমন বার্তা পাওয়া গেছে। কেননা ভারত জানে, সম্পর্ক ভালো না হলে তার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে যাবে। অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক বড় সম্পর্ক করে ফেলবে।’
কূটনীতিতে দক্ষতা ও পারদর্শিতার কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করেন এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ চললেও তার ক্ষতি, থামলেও ক্ষতি। পুরো দেশটাই হাতছাড়া হয়ে গেছে, হয় আমেরিকার দিকে, নয় রাশিয়ার দিকে। তাহলে আমি যুদ্ধটা কেন করলাম। ইতিহাস জেলেনস্কিকে কীভাবে দেখবে আমি জানি না, তবে আমরা যেন জেলনস্কি সিনড্রোমে না পড়ি সেটা ভাবতে হবে।’
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে ঢাকা-দিল্লি দুই পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে বলেও মনে করেন ইমতিয়াজ আহমেদ।