প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমরা লিখিত বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি। বিতর্কিত উপদেষ্টার বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি। ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছি। যেকোনো উছিলায় নির্বাচন দেরি হলে স্বৈরাচার ফিরে আসার পথ সৃষ্টি হবে। এর দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে।’
এ সময় দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দুই ছাত্র উপদেষ্টা, এদের কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাদের বাদ দেওয়ার কথা আমরা বলেছি। আমাদের বিশ্বাস, ওনারা এটা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।’
গত বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামানের দেওয়া কিছু বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন শেষ করার বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন বলে এই প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়।
এর পরদিন উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়। ওইদিন রাতেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বৈঠক শেষে তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তার ফেসবুকে লেখেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না। অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রাঞ্জিশনের জন্য ড. ইউনূস স্যারের দরকার আছে।’
অবশ্য এরপর পরই তিনি সেই লেখাটি তুলে নেন। নতুন একটি পোস্টে ফয়েজ আহমদ লেখেন, ‘ডিসক্লেইমার। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্যারের বিষয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসটি আমার ব্যক্তিগত মতামত। এটাকে নিউজ না করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। ধন্যবাদ সহ।’
একই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে জানান, বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি। পদত্যাগের ইচ্ছা তার ব্যক্তিগত বিষয়। প্রধান উপদেষ্টা শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব থেকে সরে গেলে রাষ্ট্র পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ পরিস্থিতিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টা। শুক্রবার দল দুটির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এদিন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের কথা রয়েছে।