প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তার সুফল জনগণ পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত।
জামায়াত আমির বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার জন্য বর্তমান পরিস্থিতি কষ্টের। বিরক্তির। সংস্কার ও বিচারের মধ্য দিয়ে অর্থবহ নির্বাচন হবে। আমরা বলেছি দুটো বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। কমফোর্টেবল সময়ে নির্বাচন হতে হবে। আর বিচারের কিছু বিষয় দৃশ্যমান হওয়া। সংস্কার শেষ না করে নির্বাচন হলে তার সুফল জনগণ পাবে না। সংস্কার না করে নির্বাচন হলে তা সরকার গ্রহণ করবে না।’
এ সময় তিনি জানান, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। জামায়াত আমির বলেন, ‘সংস্কার ও বিচারের মধ্য দিয়ে অর্থবহ নির্বাচন হবে। কিছু সংস্কার এখন হতে পারে, কিছু নির্বাচনের পরে।’
নির্বাচনের জন্য সরকারকে সময় বেধে না দিলেও যতো দ্রুত সম্ভব একটি রোডম্যাপ দিতে বলেছে জামায়াত। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য সরকারকে কোনো সময় বেধে দেইনি। ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে। এর পরে যদি হয় নির্বাচন বৈরি হতে পারে।’
এ সময় দেশের স্বার্থে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বানও জানান জামায়াত আমির। দলটির পক্ষ থেকে কারও পদত্যাগ চাওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবি জানায় বিএনপি। একই সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
বৈঠক শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা লিখিত বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি। বিতর্কিত উপদেষ্টার বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি। ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছি। যেকোনো উছিলায় নির্বাচন দেরি হলে স্বৈরাচার ফিরে আসার পথ সৃষ্টি হবে। এর দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে।’
গত বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামানের দেওয়া কিছু বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন শেষ করার বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন বলে এই প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়।
এর পরদিন উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়। ওইদিন রাতেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বৈঠক শেষে তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তার ফেসবুকে লেখেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না। অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রাঞ্জিশনের জন্য ড. ইউনূস স্যারের দরকার আছে।’
অবশ্য এরপর পরই তিনি সেই লেখাটি তুলে নেন। নতুন একটি পোস্টে ফয়েজ আহমদ লেখেন, ‘ডিসক্লেইমার। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্যারের বিষয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসটি আমার ব্যক্তিগত মতামত। এটাকে নিউজ না করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। ধন্যবাদ সহ।’
একই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে জানান, বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি। পদত্যাগের ইচ্ছা তার ব্যক্তিগত বিষয়। প্রধান উপদেষ্টা শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব থেকে সরে গেলে রাষ্ট্র পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ পরিস্থিতিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টা। শুক্রবার দল দুটির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এদিন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের কথা রয়েছে।