ডেঙ্গু ও করোনার প্রকোপ বাড়ছে। করোনায় গত মাসের তুলনায় আক্রান্ত তিনগুণ, আর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মৃত্যু না হলেও শুধু জুনেই মারা গেছে ১৬ জন। এদিকে, ডেঙ্গুতে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৮০০; এর মধ্যে চলতি মাসের ২৩ দিনেই আক্রান্ত সাড়ে ৩ হাজার। আর এ বছরে ৩২ মৃত্যুর ৮ জনেরই এ মাসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে।
রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বিল্লাল তালুকদার। কয়েকদিন ধরে ভুগছেন জ্বর-মাথাব্যথায়।
বিল্লাল তালুকদার বলেন, ‘দুই দিন ধরে জ্বর, এখন আসছি পরীক্ষা করাতে। দেখি কী হয় পরীক্ষার পর।’
ডেঙ্গু ও করোনা বাড়তে থাকায় বিল্লালের মতো জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্নরা ভিড় করছেন হাসপাতালে।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আসিফ হায়দার বলেন, ‘ল্যাব পরীক্ষার পর দেখা যাচ্ছে হয়তো তাদের রক্তের বিভিন্ন মাত্রা কমে যাচ্ছে, হয়তো প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। এই ধরনের কয়েকটি রোগী আমাদের কাছে আসছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানাচ্ছে, এপ্রিলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৩, মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬। আর এ মাসের ২২ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত ২৭৫। ১ জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত কারও মৃত্যু না হলেও, শুধু জুনের এ কদিনেই মারা গেছেন ১৬ জন।
একইসঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীও। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এ বছর মোট শনাক্ত রোগী ৭ হাজার ৭৫৮ জন। শুধু জুনেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। গত মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৩ জন; আর চলতি মাসের এক সপ্তাহ বাকি থাকতেই মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।
এরই মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে দেশব্যাপি। মোট শনাক্তের পঁচাত্তর শতাংশই এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরের বাইরের রোগী। সচেতন না হলে অবস্থা সামাল দেওয়া কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘যখন রোগীর সংখ্যা বাড়ে তখন আমাদের বিভিন্ন ক্রাসিস দেখা দেয়। তখন অনেক হাসপাতাল থাকলেও কিন্তু তাদের পক্ষ সম্ভব না এতো রোগীকে সেবা দেওয়া।’
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জরিপ বলছে, বরগুনা,ঝিনাইদহ, মাগুরা, বরিশাল ও পিরোজপুরসহ ৮ জেলা ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘মশার বংশ বিস্তারের জায়গাটা নষ্ট করতে হবে, ধ্বংস করতে হবে। সেখানে আমরা কতখানি সক্রিয় রয়েছি সেটা বিবেচনা করা।’
বর্ষা এলে প্রতি বছরই ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ে, এর সঙ্গে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ।