বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাকরিচ্যুত ও অবসরপ্রাপ্ত কিছু সদস্য। গত ৮ মাসে রাজধানীতে ৪৭টি ডাকাতির ঘটনায় বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক ৩৬ সদস্য ও সোর্সের নাম এসেছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন বর্তমান সদস্য ও সোর্সরাও। অপরাধী যেই হোক, কাউকেই ছাড় না দেওয়ার হুঁশিয়ারি পুলিশের।
১৪ জুন রাজধানীর উত্তরায় র্যাবের পোশাকে একটি বেসরকারি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মীর গতিরোধ করা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় সঙ্গে থাকা ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ। প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটলেও র্যাব ভেবে এগিয়ে যাননি কেউ।
এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় নগদ ২২ লাখ টাকা। তদন্তে জানা যায়, চাকরিচ্যুত পুলিশ ও সেনা সদস্যদের নেতৃত্বে হয় ডাকাতি।
গত বছর অক্টোবরেও যৌথবাহিনীর সদস্য সেজে মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৭৫ লাখ টাকা লুট হয়। তদন্তে উঠে আসে এই ঘটনায় চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেলসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১১ সাবেক সদস্য জড়িত ছিলেন।
পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবর মাসে ডাকাতির মামলা হয়েছে ৬টি, নভেম্বরে ২টি, ডিসেম্বরে ১০টি, জানুয়ারিতে ৮টি, ফেব্রিয়ারিতে ৬টি, মার্চে ৩টি, এপ্রিলে ৭টি এবং মে মাসে ৫টি। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক ৩৬ সদস্য ও সোর্সের নাম এসেছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫ জন।
বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘যিনি কোনো অপরাধ করেন, তাঁকে আমরা অপরাধী হিসেবেই গণ্য করি। তিনি কোনো বাহিনীর সদস্য হলেও তাঁকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। আমরা নজরদারিতে রাখছি যে, আমাদের কোনো সদস্য অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কিনা।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সে যেখানেই চাকরি করুক, সেখানকার সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করতে হবে।
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা যেমন চ্যালেঞ্জের তেমন এই শ্রেণির অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা আরও চ্যালেঞ্জের। এমন ঘটনা হঠাৎ করে ঘটেনি, এমন ঘটনা বহু আগে থেকেই ঘটছে। সংখ্যার তারতম্য আছে। গত ১০ মাসে এমন অপরাধের সংখ্যাটা বেশি।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কেউ অভিযানে গেলে ৯৯৯ বা কাছের থানায় কল দেওয়ার পরামর্শ পুলিশের।