মাগুরায় বোনের বাড়িতে শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।
আজ বৃহস্পতিবার পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এনসিপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।’
নিপীড়িত শিশুটির ওপর চলা নির্যাতন এবং তাঁর মৃত্যু আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার জন্য চরম লজ্জাজনক। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র গঠনের এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে এই নির্মম ঘটনা হতাশাজনকও বটে। এনসিপি এই ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেই তীব্র প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে।
ফ্যাসিবাদী আমলে প্রতিষ্ঠিত বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা বাংলাদেশে অবাধে ঘটেছে। জুলাই অভ্যুত্থানোত্তর নতুন বাংলাদেশে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জোর দাবি জানাই আমরা। শিশু আছিয়া ধর্ষণসহ নারী নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের অতিদ্রুত তদন্তপূর্বক বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করে বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।
এদিকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বর্বরতার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া আমাদের বোনের চলে যাওয়ায় অত্যন্ত ভারাক্রান্ত, বিপন্ন এবং ক্ষুব্ধ বোধ করছি।’
‘আমরা মনে করি, শিশুটির মৃত্যু একটি কাঠামোবদ্ধ হত্যাকাণ্ড যা ধর্ষণকামী সমাজকাঠামো থেকে গড়ে উঠেছে। এদেশে বর্ণ-ধর্ম-বয়স-গোত্র নির্বিশেষে নারীদের জীবনকে বিপর্যস্ত ও বিপন্ন করে তোলা হয়েছে যার চূড়ান্ত ফলাফল একজন আট বছরের শিশুর ধর্ষণে হত্যা। সমাজকাঠামোর যদি পরিবর্তন না আনা হয় এবং আইনের সুশাসন যদি নিশ্চিত না করা হয় তাহলে আরো আসিয়াদের জীবন সামনে বিপন্নতার দিকে এগিয়ে যাবে যা আমরা কখনোই হতে দিতে পারি না।’
‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ রাষ্ট্রকে জননিরাপত্তা ও বিশেষত নারী এবং শিশুদের ধর্ষণ ও নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের আহবান জানাচ্ছি। পাশাপাশি দ্রুততম সময় যাতে ধর্ষণের মত বর্বরোচিত অপরাধের তদন্তকার্য সম্পন্ন করা সম্ভব হয় সেজন্য পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানাচ্ছি এবং ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমেরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের জন্য মামলা দায়ের করতে পারেন ও কোনো ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক শক্তি যাতে ধর্ষককে আশ্রয়, প্রশ্রয় দেওয়া এবং প্রভাব-প্রতিপত্তির মাধ্যমে আইনের শাসনকে বানচাল না করতে পারে সে ব্যাপারে রাষ্ট্র ও সরকার উভয়কেই সর্বোচ্চ সংবেদনশীল এবং সতর্ক থাকতে হবে। ধর্ষণের মামলা দায়েরের সময় ভুক্তভোগীর সাথে যেন সর্বাত্মক সহানুভূতিশীল আচরণ করা হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় কাঠামো নির্মাণ করতে হবে যাতে কোনো প্রশ্নেই নারীর সাথে হওয়া সহিংসতা-নির্যাতনকে কেউ বৈধতা দিতে না পারে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ রাষ্ট্র-প্রশাসন-সমাজের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে এই নিপীড়নকামী, ধর্ষণকামী মানসিকতাকে প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ।’
‘আমরা বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তিকেও এহেন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার জন্য সকলে মিলে এক ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।’