তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর পর এবার ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
শফিকুর রহমান লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল পক্ষকে মান, অভিমান ও ক্ষোভ একদিকে রেখে, জাতীয় স্বার্থে দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাই। যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি। আল্লাহ তা'য়ালা এই জাতিকে সাহায্য করুন এবং সকল ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন।’
এর আগে দেওয়া আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘জাতীয় স্বার্থে স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত বিষয়গুলো আসুন সবাই এড়িয়ে চলি। সংকট উত্তরণে ইতিবাচক ভূমিকা কেবল জাতিকে উপকৃত করবে। নেতিবাচক ভূমিকা কখনোই কল্যাণ বয়ে আনে না।’
এর আগে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতেও সব পক্ষকে এক থাকতে হবে। এই দাবিতে বড় কোনো দলের নির্লিপ্ততা আমাদের হতাশ করে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা, আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচনে যাওয়ার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। ক্ষণস্থায়ী ফায়দা লুটতে গিয়ে ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের পর উদ্ভূত বিপুল সম্ভাবনার জনআকাঙ্ক্ষাকে নষ্ট করা হলে, তা হবে একটি ঐতিহাসিক ব্যর্থতা।’
অপর এক পোস্টে এনসিপির এ নেতা লেখেন, ‘জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শক্তির প্রতি আহ্বান— যে বিভাজনটা অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের মধ্যে এসেছিল, সেই বিভাজনকে দেশ ও জাতির স্বার্থে মিটিয়ে ফেলতে হবে। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নগ্ন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনে’ দেশে-বিদেশে অনেকে ‘নাখোশ’ হয়ে আছে জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘এই নাখোশ বান্দারা আমাদের বিভাজনের সুযোগ নিতে নিতে আজকের এই অস্থিতিশীল দিন এনেছে। আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ড বিখণ্ড বিখন্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশি-বিদেশি দোসরেরা আমাদের তছনছ করার হীন পাঁয়তারা করবে।’
হাসনাত আরও লিখেছেন, ‘দেশ ও জাতির প্রতি দায় এবং দরদ আছে বলেই আমরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। দেশ ও জাতির জন্যই এবার আমাদেরকে এক হয়ে আমাদের স্বদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য এই ঐক্য নয়, বরং আমাদের দেশের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোন বিকল্প নেই।’
এদিকে, এক ফেসবুক পোস্টে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেখেন, ‘দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। আগেকার যে কোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল- সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সরকারে আর একদিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সকল শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই।’
তথ্য উপদেষ্টা লেখেন, ‘পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী স্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’
মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। দেশপ্রেমিক জনগণ যারা জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, তাদের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।’
অবশ্য আগের কোন বক্তব্যের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন তা স্পষ্ট করেন নি তথ্য উপদেষ্টা। তবে গত ১০ মে রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কড়া মন্তব্য করেন। ‘দুটি কথা’ শিরোনামে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানান।
সেই পোস্টে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘৭১ এর প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। পাকিস্তান সরকার অফিসিয়ালি ক্ষমা চাইলেও, সহযোগীরা আজও ক্ষমা চায়নি।’
তিনি গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘কোনো প্রকারে ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে সেই হত্যাকাণ্ডের পক্ষে বয়ান তৈরির অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, জুলাইয়ের শক্তির ভেতরে ঢুকে বিভ্রান্তি ও অন্তর্ঘাত চালানো হচ্ছে, যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। দলটির কর্মী-সমর্থকরা অনলাইন প্রকাশ্যেই মাহফুজের সমালোচনা করেন। এনসিপির সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তাদের কোনো অংশগ্রহণ তেমন একটা চোখে পড়েনি।