অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানিয়েছেন, সরকার ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচনে সম্মতি দিয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূসকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে এই সভায় (তারেক রহমানকে) আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যে অচলাবস্থা ছিল; সবকিছু অনিশ্চিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল, সেই অবস্থাকে কাটিয়ে এই দুই নেতা জাতিকে আবার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এখন যেটা প্রয়োজন হবে, জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করা এবং সমস্যাগুলো সমাধান করে আমরা যেন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সেই নির্বাচনে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে যেতে পারি। জাতির যে আকাঙ্খা সেটা পূরণ করতে পারি।’
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘চতুর্দিকে একটা অনিশ্চয়তা ছিল। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বিভিন্নরকম কথা বলছিলেন। আজকে দুই নেতা প্রমাণ করলেন যে বাংলাদেশের মানুষ এখনো প্রয়োজনের সময় ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। নেতারা নেতৃত্ব দিতে পারেন। সেই হিসেবেই বাংলাদেশের মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘পনেরো বছরে ফ্যাসিস্টের ধ্বংস করা স্তূপে যে কাঠামো, সেই কাঠামোকে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে আমরা রূপান্তর করতে পারি। আমরা পনেরো বছর পরে গণতন্ত্রে উত্তরণের একটা সুযোগ পাচ্ছি। আমরা সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব জুলাই আন্দোলনসহ গত ১৫ বছরের লড়াই–সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের নিয়েও কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করতে হয় আমাদের সেই সমস্ত শহীদদের, যারা জুলাই–আগস্ট মাসে অধিকার আদায়ের জন্য তাদের প্রাণ দিয়েছেন। প্রাণ দিয়ে সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। ফ্যাসিস্টকে পরাজিত করে তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটা নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছেন।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘বৈঠক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমার সঙ্গে আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান সাহেবের কথা হয়েছে। তিনি এই পনেরো বছরে যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে, বুকের রক্ত দিয়েছে; জুলাই আগস্টে যারা বুকের রক্ত দিয়েছে তাদের সকল শহিদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন। দেশের জনগণকে ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্যে যে লড়াই তারা করেছে, সেই লড়াইয়ের জন্য তাদের তিনি (তারেক রহমান) ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি আমাদের নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিএনপির যারা এই পনেরো বছর ধরে লড়াই–সংগ্রাম করেছেন। নির্যাতন সহ্য করেছেন। প্রাণ দিয়েছেন। তাদেরও তিনি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ–শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’
গণতন্ত্র একদিনের ব্যাপার নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র একটা চর্চার বিষয়। এটা একটা কালচার। সেই কালচারটা আমাদের মধ্যে চর্চা করতে হবে। একে–অপরকে বকাবকি গালিগালাজ; সোশ্যাল মিডিয়াতে বকাবকি না করে আসুন আমরা একযোগে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য এগিয়ে যাই। আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিউয়াউর রহমানের স্বপ্ন, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্বপ্ন, আমাদের নেতা তারেক রহমানের স্বপ্ন এবং আমাদের যে সমস্ত শহিদ প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য।’