কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি খাতে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশ সাউথ কোরিয়া। দেশটির এআই কমপিউটিং সেন্টারে নতুন সেবা চালু করতে চলতি বছরই ১০ হাজার উন্নতমানের এআই সক্ষমতার জিপিইউ (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সাউথ কোরিয়া সরকার। নিজেদের উদ্ভাবনী সক্ষমতার অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আজ (মঙ্গলবার) এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চই স্যাং-মক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির তাৎপর্য এখন আর কেবলই প্রযুক্তিখাতের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ এক অনুষঙ্গ। ফলে প্রতিষ্ঠানকে ছাপিয়ে এআই হয়ে উঠেছে জাতীয় নীতিমালার অংশ। এই প্রেক্ষাপটে আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ইতোমধ্যেই এআই প্রযুক্তি নিয়ে বিশদ পরিকল্পনা তৈরি করেছে। চীন-ও যে একই পথে হাঁটছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’
বিশ্ব প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দেশ সাউথ কোরিয়াও এখন এআই নিয়ে জাতীয় নীতিগত পর্যায়ে গুরুত্বসহকারে ভাবছে। ১০ হাজার এআই প্রসেসর বা জিপিইউ সংগ্রহ করার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে এআই সেবা চালুর বিষয়টি এআই নিয়ে সাউথ কোরিয়ার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনারই ইঙ্গিত বহন করে।
বিশ্ব রাজনীতিতে এআই’র ভূমিকার কথা স্বীকার করেই বিবৃতিতে সাউথ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চই স্যাং-মক বলেন, ‘এআই শিল্পে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ার সাথে সাথে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লড়াই থেকে পূর্ণমাত্রায় বিভিন্ন দেশের জাতীয় উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেমের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রুপান্তরিত হচ্ছে।’
গত মাসেই আমেরিকা সরকার তাঁদের দেশে উৎপাদিত সবচেয়ে উন্নতমানের এআই চিপ ও প্রযুক্তির প্রবাহ ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন নীতি প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এই নীতির অধীনে উন্নত জিপিইউ রপ্তানিতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ছে। উল্লেখ্য, এই জিপিইউগুলো হচ্ছে বিশেষ ধরণের প্রসেসর যেগুলো মূলত গ্রাফিক্স রেনডারিংয়ের কাজকে ত্বরান্বিত করে।
তবে সাউথ কোরিয়ার জন্য ভালো খবর এই যে, এআই চিপ রপ্তানিতে আমেরিকা সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধ যে ১৮টি দেশের উপর প্রযোজ্য নয় তার মধ্যে সাউথ কোরিয়া একটি। বিভিন্ন মাত্রায় বিধিনিষেধ আরোপিত হবে বিশ্বের ১২০টি দেশের উপর। অপরদিকে ইরান, চীন ও রাশিয়ায় এআই চিপ রপ্তানি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে আমেরিকা সরকার।
উল্লেখ্য, একটি এআই মডেল তৈরি করতে কতটি জিপিইউ প্রয়োজন সেটা নির্ভর করে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে, ব্যবহৃত জিপিইউ কতটা উন্নতমানের, কী পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করা হচ্ছে এআই মডেলটির প্রশিক্ষণে, এআই মডেলটির আকার, এবং কত সময়ের মধ্যে মডেলটিকে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে।
সাউথ কোরিয়া সরকার অবশ্য এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কোন প্রতিষ্ঠানের কোন জিপিইউ তাঁরা ক্রয় করতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, দেশটির সরকার মূলত পাবলিক-প্রাইভেট সহযোগীতার মাধ্যমে তাঁদের প্রয়োজনীয় ১০ হাজার এআই-সক্ষমতার জিপিইউ কিনবে।
তবে জিপিইউ’র বাজেট, জিপিইউ মডেল এবং ক্রয়ের প্রক্রিয়ায় কোন কোন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান অংশ নিবে- তার বিস্তারিত আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে দেশটির বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে এআই চিপের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে এনভিডিয়া। এআই চিপের বৈশ্বিক বাজারে তাঁদের শেয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বী ইনটেল ও এএমডি থেকে তাঁরা এখন অনেকটাই এগিয়ে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স