ভিয়েতনামের রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতিতে আমেরিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অংশীদার। তবে দেশ দুটির দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভিয়েতনামের পক্ষে উদ্বৃত্ত এতোটাই বেশি যে, আমেরিকার ট্রাম্প সরকার কর্তৃক ভিয়েতনামের পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এমন সম্ভাবনা যেন বাস্তবে পরিণত না হয় সেজন্য ভিয়েতনাম সরকার তাঁদের দেশে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ইলন মাস্কের স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালু করার প্রাথমিক রাস্তা তৈরি করেছে।
ভিয়েতনাম সরকার সম্প্রতি একটি খসড়া নিয়মাবলী তৈরি করেছে যেটা আজ (বুধবার) দেশটির সংসদে উত্থাপিত হওয়ার কথা। ১২ পৃষ্ঠার এই প্রস্তাবিত নিয়মাবলীর উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে বিদ্যমান বিভিন্ন বাধা বা প্রতিবন্ধকতা দূর করা। এতে এমন একটি বিধান রাখা হয়েছে যার কল্যাণে বিদেশী মালিকানাধীন বা বিদেশী প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রিত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালেই ভিয়েতনামে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালু করতে চেয়েছিল এর মালিক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। কিন্তু মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের এই আর্জি সে সময় গৃহীত হয়নি, কারণ কমিউনিস্ট সরকার পরিচালিত ভিয়েতনামে বিদেশী প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রিত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা এতদিন নিষিদ্ধ ছিল।
খসড়া নিয়মাবলী অনুযায়ী, ২০৩০ সালের শেষ পর্যন্ত চলমান একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় পৃথিবীর নিম্ন-কক্ষপথে স্থাপিত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের অনুমতি দেওয়া হবে স্টারলিংকের মতো বিদেশী প্রতিষ্ঠানকেও। এক্ষেত্রে পাইলট প্রকল্পের অধীনে জমা দেওয়া প্রকল্পগুলির জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
নতুন খসড়া নিয়মাবলীর কল্যাণে দেশটিতে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালুর পথ প্রশস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেম ভেনিজুয়েলা সরকারের এক কর্মকর্তা। তবে স্টারলিংকের মালিক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এবং ভিয়েতনামের তথ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, ভিয়েতনাম সরকারের হঠাৎ এই হৃদয় পরিবর্তন কেন? গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা পারস্পরিক শুল্ক আরোপের নির্দেশ দেয় এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধে যেসব দেশে আমেরিকান পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করা হয়। পাশাপাশি যে সকল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে আমেরিকা বিশাল অংকের ঘাটতির সম্মুখীন সেসব দেশে আমেরিকান পণ্য রপ্তানি বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভিয়েতনাম সরকার নতুন এই নিয়মাবলী নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশটিতে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালুর রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। এতে করে কী লাভ হবে ভিয়েতনামের? প্রথমত, ১০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনামে স্টারলিংক ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তাঁদের সাথে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা ভদ্রোচিত দেখাবে। দ্বিতীয়ত, নিজেদের বিশাল জনগোষ্ঠীর বাজারকে ইলন মাস্কের স্টারলিংকের জন্য উন্মুক্ত করার মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায় ভিয়েতনাম।
উল্লেখ্য, গত বছর আমেরিকার সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভিয়েতনামের উদ্বৃত্ত পৌঁছায় রেকর্ড ১২৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী, অর্থের অংকে ভিয়েতনাম তাঁদের চতুর্থ বড় বাণিজ্য অংশীদার।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স