জনপ্রিয় এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি’তে আসতে শুরু করেছে এআই এজেন্ট ‘অপারেটর’। এর ফলে প্রথমবারের মতো চ্যাটজিপিটি’র ব্যবহারকারীরা এজেন্টিক সক্ষমতার একটি এআই মডেল অ্যাক্সেস করার সুযোগ পাবেন। ওপেনএআই গত মাসে (জানুয়ারি) তাঁদের ‘অপারেটর’ এআই এজেন্টটি আমেরিকার বাজারে নিয়ে আসে। এবার জানা গেল, আজ (শুক্রবার) থেকে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যসহ আরও কিছু দেশে চ্যাটজিপিটি’তে যুক্ত হতে যাচ্ছে ‘অপারেটর’ মডেলটি।
এআই এজেন্ট হচ্ছে এআই প্রযুক্তিভিত্তিক একটি কমপিউটার প্রোগ্রাম যেটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে একাধিক কাজ সম্পন্ন করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই ‘অটোনোমাস’ (স্বনিয়ন্ত্রণের) সক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে এআই এজেন্টগুলো। অর্থাৎ, নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারে এরা।
চ্যাটজিপিটি’তে নতুন এই এজেন্টিক সক্ষমতা যুক্ত হলেও আপাতত ‘চ্যাটজিপিটি প্রো’ গ্রাহকরাই কেবলমাত্র এটি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ, ‘অপারেটর’ এজেন্টটি আক্সেস করতে হলে অবশ্যই চ্যাটজিপিটি প্রো গ্রাহক হতে হবে, যার জন্য প্রতি মাসে গুণতে হবে ২০০ ডলার। তবে ওপেনএআই এও জানিয়েছে যে, ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটি’র সকল ব্যবহারকারীর জন্যই ‘অপারেটর’-কে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ওপেনএআই।
ওপেনএআই জানিয়েছে, ‘অপারেটর’ এআই এজেন্টটি অচিরেই চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারী আছে এমন প্রায় প্রতিটি দেশেই পৌঁছে যাবে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল ৫টি অঞ্চল: ইইউ (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন), সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও লিচেনস্টাইন।
‘অপারেটর’ এআই এজেন্ট ব্যবহার করে টিকিট বুকিং, রেস্তোরাঁর রিজার্ভেশন থেকে শুরু করে খরচের রিপোর্ট জমা দেওয়া, বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করা পর্যন্ত নানাবিধ কাজ করতে পারবেন চ্যাটজিপিটি প্রো গ্রাহকরা। বিভিন্ন কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে ‘অপারেটর’ আলাদা ব্রাউজার উইন্ডো ব্যবহার করে থাকে এবং ব্যবহারকারী চাইলে যেকোনো সময় ব্রাউজারের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে নিয়ে নিতে পারেন।
সহজ করে বললে, ‘অপারেটর’ এআই এজেন্ট ব্যবহার করে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারী এমন অনেক কাজ করতে পারবেন যেটা ইতোপূর্বে তাকে বেশ কয়েকটি ধাপে করতে হতো এবং এজন্য অনেকটা সময়ও ব্যয় করতে হতো। এই যেমন, একজন ব্যবহারকারী হয়তো ঢাকা থেকে লন্ডন এয়ার টিকিট কিনতে চাইছেন। ধরা যাক, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগামী মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে আন্তর্জাতিক ছুটির দিন (শনিবার ও রবিবার) ব্যতীত কোনো এক দিন দুপুর ১২টার আগে ঢাকা থেকে লন্ডনগামী ফ্লাইটের সম্ভাব্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী এয়ার টিকিটটি বুক করা। স্বাভাবিকভাবে এই কাজটি করতে হলে অনলাইনে বেশ কয়েকটি সাইট ভিজিট করতে হবে, বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মধ্যে তুলনা করতে হবে এবং সর্বোপরি কার্ডে পেমেন্ট করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট টিকিটটি নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিতভাবেই এটি বেশ সময়সাপেক্ষ একটি বিষয়।
‘অপারেটর’ ঠিক এই কাজটিই ব্যবহারকারীর হস্তক্ষেপ ব্যতীত করতে সক্ষম। অর্থাৎ প্রতিটি ধাপে ব্যবহারকারীকে নির্দেশ দিতে হবে না। একবার প্রম্পট জেনারেট করে দিলেই সে অনুযায়ী কাজ করবে এই এআই এজেন্ট। এতে ব্যবহারকারীর সময় ও শ্রম উভয়েরই সাশ্রয় হবে।
এআই জগতের পরবর্তী সবচেয়ে জনপ্রিয় টুল হতে যাচ্ছে এআই এজেন্ট। ইতোমধ্যেই এজেন্টের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। গুগল, অ্যানথ্রোপিক ও র্যাবিট-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এআই এজেন্ট তৈরি করেছে। অ্যানথ্রোপিক তাঁদের এজেন্টিক ইনটারফেসটি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে এপিআই-এর মাধ্যমে। অন্যদিকে গুগলের এজেন্টিক এআই প্রোজেক্টটি আপাতত অপেক্ষমাণ আছে। এছাড়া র্যাবিটের অ্যাকশন মডেলটি তাঁদের ডিভাইস ব্যবহারকারীরা ইতোমধ্যেই ব্যবহার করতে পারছেন।
চ্যাটজিপিটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এআই টুল। এখন দেখার বিষয়, ‘অপারেটর’ এআই এজেন্ট তাঁদের গ্রাহকদের অভিজ্ঞতায় কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।
তথ্যসূত্র: টেকক্রাঞ্চ
