ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এবার ফ্লোরিডাতে তাঁদের স্টারশিপ রকেট প্রোগ্রামের সম্প্রসারণে অন্তত ১.৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। ফ্লোরিডার স্পেস কোস্টে স্টারশিপ রকেটের জন্য নতুন উৎক্ষেপণ প্যাড ও অবকাঠামো নির্মাণে এই বিশাল অংকের অর্থ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার (৩ মার্চ) ফ্লোরিডা গভর্নর রন ডিসান্তিসের অফিস কর্তৃক প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই প্রকল্পে স্পেসএক্সের অন্তত ১.৮ বিলিয়ন ডলার মূলধন বিনিয়োগের কথা উল্লেখ রয়েছে এবং এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে স্পেস কোস্টে আনুমানিক ৬০০ নতুন পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
পরিকল্পিত এই সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অধীনে স্টারশিপের জন্য দুটি নতুন উৎক্ষেপণ প্যাড বা লঞ্চপ্যাড নির্মান করতে চায় স্পেসএক্স। ফ্লোরিডায় তাঁদের মূল উৎক্ষেপণ সাইটের সন্নিকটেই উৎক্ষেপণ প্যাড দুটি তৈরির পরিকল্পনা তাঁদের। প্যাড দুটির একটি হচ্ছে ‘লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ’- যেটি তৈরি করা হবে নাসা’র কেনেডি স্পেস সেন্টারে অবস্থিত স্পেসএক্সের প্রাইমারি লঞ্চ সাইটের একেবারে কাছেই।
‘লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৭’ নামের দ্বিতীয় উৎক্ষেপণ প্যাডটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশনের সন্নিকটে। উল্লেখ্য, প্রথম লঞ্চপ্যাডটি (লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ) তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
ফ্লোরিডা’তে স্টারশিপের জন্য নতুন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে স্টারশিপ রকেট প্রোগ্রামকে টেক্সাসের বাইরেও সম্প্রসারণ করতে চাইছে স্পেসএক্স। তবে তাঁদের টেক্সাসের ফ্যাসিলিটি’তে পরবর্তী প্রজন্মের রকেট তৈরি ও পরীক্ষার কাজ অব্যাহত থাকবে আগের মতোই। টেক্সাস ফ্যাক্টরিতে তৈরি উন্নত এই রকেটে করে আরও বড় আকারের পেলোড (যেমন স্যাটেলাইট) মহাকাশে পাঠানোর পাশাপাশি চলতি দশকের শেষ দিকে চাঁদের মাটিতে মানুষ পাঠানোর উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাও রয়েছে স্পেসএক্সের।
ফ্লোরিডা’তে নতুন উৎক্ষেপণ অবকাঠামো নির্মাণে ১.৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়টি স্পেসএক্সের তরফ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বিশাল অংকের অর্থ খরচ করে তাঁরা ৮ লাখ ১৫ হাজার বর্গফুটের ‘গিগাবে’ ফ্যাসিলিটি নির্মাণ করতে চায়, যেটা লম্বায় হবে ৩৮০ ফিট। নির্মাণ সম্পন্ন হলে এখানেই অ্যাসেম্বল করা হবে ভবিষ্যতের স্টারশিপ রকেট এবং এখান থেকেই রকেটগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হবে উৎক্ষেপণ প্যাডে।
অবশ্য ফ্লোরিডাতে স্পেসএক্স এখনও স্টারশিপ রকেট উৎক্ষেপণের অনুমতি পায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে। স্থানীয় পরিবেশের ওপর স্টারশিপ রকেট উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য প্রভাব খতিয়ে দেখছে আমেরিকার এয়ার ফোর্স। স্পেসএক্সের পরিকল্পনা ও এর পরিবেশগত প্রভাব উল্লেখ করে একটি খসড়া প্রতিবেদন এ বছরের প্রথমার্ধেই প্রকাশিত হওয়ার কথা। পরবর্তীতে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্পেসএক্সকে জানিয়ে দিবে তাঁরা ফ্লোরিডা’তে স্টারশিপ রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারবে কিনা।
আমেরিকা সরকারের কর্তাব্যক্তিরা দীর্ঘ অনেক বছর ধরেই রকেট বিধ্বস্ত হলে এর সম্ভাব্য পরিবেশগত প্রভাব এবং এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্ব্যাস্থগত ঝুঁকি পর্যালোচনা করে আসছে। বিশাল আকারের এই রকেটে শক্তি যোগান দিতে ব্যবহৃত হয় মিথেন গ্যাস ও তরল অক্সিজেন। রকেট বিধ্বস্ত হলে এই পদার্থগুলোও স্বভাবিকভাবেই পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, টেক্সাসের বোকা চিকায় স্পেসএক্সের ফ্যাসিলিটি’তে স্টারশিপ রকেটের একাধিক প্রোটোটাইপ বা মডেল বিধ্বস্ত হয়েছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেও স্পেসএক্সের স্টারশিপ প্রোগ্রামের গতিতে ছেদ পড়েনি এতোটুকুও।
স্টারশিপ রকেটের প্রোটোটাইপ বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টিকে স্পেসএক্স অবশ্য শেখার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছে। রকেট উন্নয়নের এই মূলধন-নির্ভর প্রক্রিয়ায় পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা সাফল্য-ব্যর্থতা উভয়ই দীর্ঘমেয়াদে একটি ঝুঁকিহীন রকেট সিস্টেম তৈরিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স