আমেরিকার পাল্টা শুল্কের প্রভাব এড়াতে নিজেদের চিপ শিল্পের (ইন্ডাস্ট্রির) জন্য ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সাউথ কোরিয়া সরকার। স্থানীয় মুদ্রায় অর্থের অংকটা ৩৩ ট্রিলিয়ন ওয়ান। সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত বছর সাউথ কোরিয়া সরকার দেশটির চিপ শিল্পের উন্নয়নে ২৬ ট্রিলিয়ন কোরিয়ান ওয়ানের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করে। তবে সম্প্রতি সেমিকনডাকটরের ওপর মার্কিন শুল্কের প্রভাবজনিত অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে নিজেদের চিপ শিল্পের জন্য সহায়তা প্যাকেজের অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর বিভিন্ন মাত্রার পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি সকল পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ সর্বজনীন শুল্ক আরোপের কথাও জানান তিনি। তবে ৫ এপ্রিল থেকে ১০ শতাংশ সর্বজনীন শুল্কারোপ কার্যকর হলেও, মার্কিন সরকার পাল্টা শুল্ক কার্যকর ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেয়।
এরপর ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, সেমিকনডাকটর, স্মার্টফোনসহ বেশ কিছু প্রযুক্তি পণ্য পাল্টা শুল্কের আওতার বাইরে থাকবে। কিন্তু তার এক দিন পরই ট্রাম্প ও তাঁর সরকারের শীর্ষ কর্তারা জানিয়ে দেন যে, সেমিকনডাকটরের মতো কিছু পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ না হলেও এগুলো পুরোপুরি শুল্কমুক্ত থাকবে না। বরং এমন কিছু প্রযুক্তি পণ্যের ওপর নির্দিষ্ট হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আসবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এই প্রেক্ষাপটে সাউথ কোরিয়ার সেমিকনডাকটর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। কেননা আমেরিকা তাঁদের বড় এক বাজার। সেখানে যদি শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হয় সেক্ষেত্রে দাম বেড়ে যেতে পারে। ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সেমিকনডাকটরের তুলনায় কোরিয়ান সেমিকনডাকটরের চাহিদা কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাজার হারানোর সমূহ সম্ভাবনা আছে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলোর।
এছাড়া চীনের সেমিকনডাকটর নির্মাতাদের সাথেও প্রতিযোগীতা করতে হচ্ছে সাউথ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সে কারণেই সাউথ কোরিয়ার চিপ শিল্পের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। সাউথ কোরিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের যৌথ বিবৃতিতে এমনটাই জানানো হয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার চিপ শিল্পের উন্নয়নে ২০ ট্রিলিয়ন কোরিয়ান ওয়ান অর্থ সহায়তা করতে যাচ্ছে, যেটা আগে ছিল ১৭ ট্রিলিয়ন ওয়ান। এই অর্থ সহায়তার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈশ্বিক বাজারে খরচ বৃদ্ধি পেলেও স্থানীয় চিপ নির্মাতারা যাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।
এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ সাউথ কোরিয়ার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান চিপ শিল্পের। গত বছর (২০২৪) সাউথ কোরিয়া ১৪১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সেমিকনডাকটর রপ্তানি করেছে, যেটা দেশটির মোট রপ্তানির ২১ শতাংশ। অর্থাৎ, তাঁদের রপ্তানি আয়ের এক-পঞ্চমাংশই আসে সেমিকনডাকটর থেকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে স্যামসাং ও এসকে হাইনিক্সের মতো কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান চীনের চিপ নির্মাতাদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।
সাউথ কোরিয়ার চিপ নির্মাতাদের জন্য চীন ও আমেরিকা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ বাজার। গত বছর চীনের বাজারে ৪৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার এবং আমেরিকার বাজারে ১০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের চিপ বা সেমিকনডাকটর রপ্তানি করেছে সাউথ কোরিয়ার নির্মাতারা। কিন্তু স্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চীন সরকারের ভর্তুকি এবং আমেরিকার ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতি- এই দুইয়ের প্রভাবে কোরিয়ান চিপ নির্মাতারা নিকট ভবিষ্যতে শক্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বলেই ধারণা করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স