চীনে উচ্চ পর্যায়ের (অ্যাডভান্সড) সাইবার হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। গত ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ান উইন্টার গেমস চলাকালীন সময়ে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোতে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ চীনের। আজ মঙ্গলবার চীন জানিয়েছে, আমেরিকার জাতীয় সুরক্ষা সংস্থা (এনএসএ) উচ্চ পর্যায়ের এই সাইবার হামলা চালিয়েছে।
দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর হারবিনের পুলিশ তদন্ত শেষ করে ৩ জন অভিযুক্ত এনএসএ এজেন্টকে ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও এই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে।
অভিযুক্ত এনএসএ এজেন্টরা হলেন ক্যাথরিন এ উইলসন, রবার্ট জে. স্নেলিং ও স্টিফেন ডব্লিউ জনসন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত তিন এজেন্টের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার চীনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামোতে এবং হুয়াওয়েসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে আমেরিকার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এই হামলায় যুক্ত আছে সে সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হয়নি সিনহুয়ার প্রতিবেদনে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমেরিকা কর্তৃক সাইবার হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং বেইজিং তাঁদের উদ্বেগের কথা ইতোমধ্যেই আমেরিকাকে জানিয়েছে। সাইবার হামলা প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চেয়ে করা ই-মেইলের কোনো উত্তর দেয়নি মার্কিন দুতাবাস।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘আমরা আমেরিকাকে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে দায়িত্বশীল আচরণের এবং চীনের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক অপবাদ ও হামলা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’
হারবিন শহরের পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর বরাত দিয়ে সিনহুয়া বলছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (NSA) হেইলংজিয়াং প্রদেশের এনার্জি, পরিবহন, পানি সংরক্ষণ, যোগাযোগ এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোতে সাইবার হামলা চালিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ‘চীনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য চুরি করা।’
আমেরিকার বিরুদ্ধে সাইবার হামলার বিস্তারিত অভিযোগ এমন এক সময়ে চীন সামনে নিয়ে এল যখন দেশ দুটি একে-অন্যের সাথে শুল্কযুদ্ধে অবতীর্ণ। সম্প্রতি ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতির প্রতিক্রিয়ায় চীন সরকারও আমেরিকান পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করে। এরপর বেশ কয়েক ধাপে দেশ দুটির একে-অন্যের ওপর শুল্কের হার বৃদ্ধি করে। বর্তমানে চীনের বাজারে আমেরিকান পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক এবং আমেরিকার বাজারে চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর আছে।
শুধু তাই নয়, আমেরিকা ভ্রমণে চীনের পর্যটকদের ভ্রমণ সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং চীন সরকার ইতোমধ্যেই আমেরিকা থেকে চলচ্চিত্র আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স