আমেরিকার মোট জনসংখ্যা বর্তমানে ৩৪ কোটি। অথচ একটি অ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা তার চেয়েও ১ কোটি বেশি, অর্থাৎ ৩৫ কোটি। বলা হচ্ছে গুগলের জনপ্রিয় এআই চ্যাটবট জেমিনি’র কথা। জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তিতে তৈরি এই অ্যাপটি স্বল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ এআই চ্যাটবট তথা টুলগুলোর একটি হচ্ছে এটি। সম্প্রতি জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৩৫ কোটি মানুষ প্রতিমাসে জেমিনি এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট টুলটি ব্যবহার করেন।
গুগলের বিরুদ্ধে চলমান অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় আদালতে দাখিলকৃত আভ্যন্তরীণ নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ইনফরমেশন।
গুগল জেমিনি’র ব্যবহার গত বছর ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অক্টোবরে (২০২৪) জেমিনি’র মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৯ মিলিয়ন বা ৯০ লাখ। সেটাই ৬ মাসের ব্যবধানে বেড়ে গত মাসে (মার্চে) দাঁড়িয়েছে ৩৫০ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটিতে। অর্থাৎ, বিগত ৬ মাসে টুলটির সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে এআই টুলের জনপ্রিয়তায় এখনও শীর্ষে আছে ওপেনএআই’র চ্যাটজিপিটি। আদালতে জমা দেওয়া নথিতে গুগল উল্লেখ করেছে যে, গত মাসে (মার্চে) চ্যাটজিপিটি’র সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বা ৬০ কোটি। গত সেপ্টেম্বরে মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গের দেওয়া তথ্য অনুসারে মেটা এআই টুলটির মাসিক ব্যবহারকারী সংখ্যা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি।
মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিরূপণের প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হলেও এটা স্পষ্ট যে, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে গুগল জেমিনি’র ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে রীতিমতো উল্কার গতিতে। এর পেছনে অবশ্য বেশ কিছু কারণ রয়েছে। টুল হিসেবে জেমিনি’র মান ও কার্যকারিতা চ্যাটজিপিটি’র মতো শীর্ষ এআই টুলগুলোর সাথে তুলনাযোগ্য হলেও ব্যবহারকারী বাড়াতে বাজারে প্রতিযোগিতা নষ্ট করারও অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। আর সে কারণে আদালতে আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের দায়ের করা অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার মুখোমুখি এখন গুগল।
গুগল তাঁদের ইকোসিস্টেমে জেমিনি’কে আগ্রাসীভাবে প্রচার করেছে এবং ব্যবহারকারীদের কাছে টুলটি তুলে ধরেছে। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীদের সামনে বিকল্প কোনো টুলও রাখেনি তাঁরা। ফলে বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ, গুগল ক্রোম ব্রাউজারে এবং গুগলের ক্লাউডভিত্তিক ওয়ার্কস্পেস অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে এআই অ্যাসিসট্যান্ট বা চ্যাটবট হিসেবে সামনে রাখা হয়েছে জেমিনিকে।
শুধু তাই নয়, স্মার্টফোন নির্মাতা স্যামসাংয়ের ফোনেও এআই চ্যাটবট হিসেবে বিল্ট-ইন বা প্রি-ইনস্টলড রাখা হয়েছে গুগল জেমিনি টুলটিকে। এজন্য গুগল প্রতি মাসে মোটা অংকের অর্থও প্রদান করে থাকে স্যামসাংকে, এমনটাই অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার শুনানিতে উঠে এসেছে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইনফরমেশন, টেকক্রাঞ্চ