শীর্ষ এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি’র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এবার আলাদা একটি এআই অ্যাপ নিয়ে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট মেটা। গতকাল মঙ্গলবার মেটা’র লামাকন ইভেন্টে স্বতন্ত্র এই অ্যাপটি উন্মোচন করেছে মার্ক জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান। এই অ্যাপটির কল্যাণে এবার থেকে মেটার এআই সার্ভিসগুলো অ্যাপের মাধ্যমেও অ্যাক্সেস করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা, ঠিক যেমনটা চ্যাটজিপিটির মতো অন্যান্য এআই অ্যাসিসট্যান্ট অ্যাপগুলোতে করা যায়।
মেটার মালিকানাধীন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে (ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে) ইতোমধ্যেই মেটা এআই সমন্বয় করা হয়েছে। অর্থাৎ, জনপ্রিয় এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোতে বর্তমানে ব্যবহারকারীরা মেটার এআই অ্যাসিসট্যান্টের সুবিধা উপভোগ করতে পারছেন। তবে এআই সার্ভিসের জন্য এতদিন আলাদা করে কোনো অ্যাপ ছিল না মেটার।
মেটা এআই অ্যাসিসট্যান্ট টুলটি লামা এআই মডেল দিয়ে তৈরি। লামা হচ্ছে ওপেন সোর্স বা উন্মুক্ত উৎসের একটি মডেল এবং এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। উন্মুক্ত উৎসের হওয়ায় লামা মডেলটিকে চাইলে নিজের মতো করে কাস্টমাইজও করে নেওয়া যায়।
অন্যান্য এআই অ্যাসিসট্যান্টের তুলনায় মেটা এআই’র সুবিধা কোথায়?
চ্যাটজিপিটি, ক্লদ, কোপাইলটের মতো এআই চ্যাটবট বা অ্যাসিসট্যান্টের তুলনায় মেটা এআই’র একটি বড় সুবিধা রয়েছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো মেটার মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর কল্যাণে ব্যবহারকারীদের বিশাল তথ্যভান্ডার রয়েছে মেটার হাতে। ব্যবহারকারীরা কি করতে ভালোবাসেন, কোথায় ঘুরতে যেতে ভালোবাসেন, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের পছন্দ-অপছন্দ- ইত্যাদি নানাবিধ তথ্য আছে মেটার কাছে। আর এই তথ্যভান্ডারই মেটা এআই’কে অন্যান্য এআই অ্যাসিসট্যান্ট থেকে আলাদা করেছে।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো’তে ব্যবহারকারীদের শেয়ার করা বিভিন্ন তথ্যকে কাজে লাগিয়ে অনেক বেশি কাস্টমাইজড সেবা দিতে সক্ষম মেটা’র এআই অ্যাপটি। অন্যান্য এআই চ্যাটবটগুলোর কাছে অবশ্য এই সুবিধা নেই। সেখানে ব্যবহারকারীদেরকে বিভিন্ন তথ্য ইনপুট দিতে হয় এবং তার ভিত্তিতেই কনটেন্ট জেনারেট করে দেয় এআই টুলগুলো।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীদের শেয়ার করা তথ্যকে কাজে লাগানোর সুযোগ থাকায় মেটা এআই ব্যবহারকারীদেরকে আরও ভালো সেবা দিতে সক্ষম বলে দাবি করেছে মেটা। প্রোফাইলে ও বিভিন্ন কনটেন্টে শেয়ার করা ব্যক্তিগত তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবহারকারীদেরকে পার্সোনালাইজড রেসপন্স (প্রতিক্রিয়া) দেওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে কেবলমাত্র আমেরিকা ও কানাডাতেই সীমাবদ্ধ।
ব্যবহারকারী চাইলে মেটাকে আরও বেশি তথ্য দিতে পারবে যাতে করে ভবিষ্যতে মেটা এআই’র সাথে কথোপকথনে সে অনুযায়ী কনটেন্ট জেনারেট করতে পারে অ্যাপটি। উদাহরণস্বরুপ, ব্যবহারকারী কোনো একটি পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়ে মেটা’কে জানিয়ে রাখলে ভবিষ্যতে তা মনে রেখেই রেসপন্স করবে মেটা এআই।
তবে মেটা’তে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে অবশ্যই অ্যাপটি সে তথ্য কীভাবে ব্যবহার করবে সে সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিৎ ব্যবহারকারীদের। মেটার আয়ের একটি বড় উৎস হচ্ছে টার্গেটেড বিজ্ঞাপনের ব্যবসা, যেখানে ব্যবহারকারীদের ডেটাই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সম্পদ।
উল্লেখ্য, মেটা এআই অ্যাপটিতে ‘ডিসকভার ফিড’ নামে একটি ফিচার রয়েছে যেখানে ইউজাররা কীভাবে এআই ব্যবহার করছে তা তাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারে। বিষয়টিকে মেটা তাঁদের ব্লগে একটি চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছে। সেখানে দেখা যায়, একজন ব্যবহারকারী এআই’কে বলছে তিনটি ইমোজি’র মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরতে, যেটা পরবর্তীতে তারা তাঁদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেছে। মেটা এআই’র সাথে একজন ব্যবহারকারীর কী কথোপকথন হচ্ছে তা কেবলমাত্র ব্যবহারকারী চাইলেই ফিডে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা হবে, অন্যথায় নয়।
সার্বিকভাবে মেটা এআই অ্যাপটি চ্যাটজিপিটি, ক্লদ, কোপাইলটের মতোই একটি জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তিতে তৈরি চ্যাটবট বা অ্যাসিসট্যান্ট। তবে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে থাকা ব্যবহারকারীদের বিশাল তথ্যভান্ডার অনেকটাই এগিয়ে রাখছে মেটা’র অ্যাপটিকে।
তথ্যসূত্র: টেকক্রাঞ্চ, মেটা