২০২০ সালে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিল গেমটি। এবারে আদালতের নির্দেশে গেমটিকে নিজেদের অ্যাপ স্টোরে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হল অ্যাপল। এপিক গেমসের তৈরি জনপ্রিয় শুটিং গেম ‘ফোর্টনাইট’ গতকাল মঙ্গলবার থেকে আমেরিকায় অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে ফিরে এসেছে। ইন-অ্যাপ পেমেন্টে অ্যাপলের কমিশন নেওয়াকে কেন্দ্র করে অ্যাপলের সাথে চলমান আইনি লড়াইয়ে এপিক গেমসের জন্য এটি বড় এক জয় হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
আইওএস ডিভাইসে ইন-অ্যাপ পেমেন্টের ক্ষেত্রে অ্যাপলের ৩০ শতাংশ কমিশন নেওয়ার বিষয়টি দেশটির অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের পরিপন্থী বলে ২০২০ সালে অভিযোগ আনে এপিক গেমস। সেই থেকে অ্যাপলের সাথে আইনি লড়াই চলছে ‘ফোর্টনাইট’ এর স্বত্বাধিকারী এপিক গেমসের।
গত মাসের (এপ্রিলের) ৩০ তারিখে আমেরিকার ফেডারেল আদালত কর্তৃক প্রকাশিত এক রায়ে বিচারক অ্যাপলের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্যের অভিযোগ আনে। অ্যাপ স্টোরে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করা ও পেমেন্ট মেথডের ক্ষেত্রে ন্যায্য প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনার আদালতের নির্দেশ প্রতিপালনে ব্যর্থ হয় অ্যাপল- এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে আদালতের রায়ে।
শুধু তাই নয়, বিচারক তাঁর রায়ে এও বলেছেন যে, আদালতের পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞার আদেশ মেনে চলতে অ্যাপল ব্যর্থ হওয়ায় বিষয়টিকে ফৌজদারি অবমাননা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বিষয়টিকে ফেডারেল প্রসিকিউটরদের কাছে পাঠানো হবে।
অ্যাপল অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলেও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাঠায়নি তাঁরা।
২০১৭ সালে যাত্রা শুরুর পর পরই দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠে একাধিক প্রতিযোগীর অংশগ্রহণে খেলা এই শ্যুটিং গেমটি। বিশেষ করে গেমটির লাস্ট-প্লেয়ার-স্ট্যান্ডিং ‘ব্যাটল রয়্যাল’ ফরম্যাট একে অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে গেমারদের কাছে। ২০২০ সালে অ্যাপলের সাথে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে অ্যাপ স্টোর থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার সময়ও কেবলমাত্র অ্যাপলের প্ল্যাটফর্মেই ১১৬ মিলিয়ন ব্যবহারকারী ছিল গেমটির।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডি.এ. ডেভিডসনের বিশ্লেষক গিল লুরিয়া মনে করেন, অ্যাপ স্টোরে ফোর্টনাইট গেমটির ফিরে আসার বিষয়টি এপিক গেমসের জন্য ‘কষ্টার্জিত এক জয়।’ তবে এই জয়ের ফলে ফোর্টনাইট গেমটির জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার হবে কি-না তা নিয়ে অবশ্য সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে অ্যাপলের জন্য বিষয়টি যে বিব্রতকর এবং এর প্রভাব যে সুদূরপ্রসারী, তা তিনি অকপটেই স্বীকার করে নিয়েছেন।
আদালতের আদেশে ফোর্টনাইটকে অ্যাপ স্টোরে ফিরিয়ে আনার ফলে এবার অন্যান্য ডেভেলপাররাও ইন-অ্যাপ পেমেন্টের ক্ষেত্রে অ্যাপলকে বড় অংকের কমিশন প্রদানে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। অর্থাৎ, সার্বিকভাবে অ্যাপলের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ এক উৎস বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বা আয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে কমে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে অ্যাপল ও গুগল উভয়ই তাঁদের নিজ নিজ অ্যাপ স্টোর থেকে ফোর্টনাইট গেমটিকে নিষিদ্ধ করে ইন-অ্যাপ পেমেন্ট নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায়। অবশ্য ইতোমধ্যেই গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোতে গেমটি ফিরে এসেছে, যেমনটা গত বছর ইউরোপের বাজারে এসেছে আইফোনে।
অ্যাপল ও গুগলের অ্যাপ স্টোরের পাশাপাশি ফোর্টনাইট গেমটি এপিক গেমস স্টোরেও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চলে অল্টস্টোরেও মিলছে এই গেমটি। গতকাল মঙ্গলবার এক্স প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে এমনটাই জানিয়েছে এপিক গেমস।
আদালতের হস্তক্ষেপে এপিক গেমসের কাছে অ্যাপলের ধরাশায়ী হওয়ার বিষয়টিকে অশনি সংকেত হিসেবে বিবেচনা করতে পারে স্পটিফাই ও নেটফ্লিক্সের মতো সাবসক্রিপশন-ভিত্তিক অ্যাপ সার্ভিসগুলো। কেননা তাঁরাও শিল্পীদের তৈরি কনটেন্ট বিক্রির ওপর কমিশন নিয়ে থাকে। এপিক গেমসের এই জয়ের ফলে অ্যাপলের আইওএস-ভিত্তিক অর্থনীতিই এখন হুমকির সম্মুখীন। স্বাধীন স্টুডিওগুলো তাঁদের তৈরি কনটেন্ট থেকে আয়ের জন্য অ্যাপলকে অতিরিক্ত কমিশন দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। আর বিষয়টি অ্যাপলেরও নিশ্চয়ই অজানা নয়।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স