নিজেদের তৈরি লামা এআই মডেলের ব্যবহার বাড়াতে নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে মার্ক জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান মেটা। ‘লামা ফর স্টার্টআপস’ নামে নতুন একটি প্রোগ্রাম চালু করেছে মার্কিন এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট। এই উদ্যোগের অধীনে নির্দিষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানকে লামা মডেল দিয়ে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য সরাসরি অর্থ সহায়তা প্রদান করবে মেটা।
গত বুধবার (২১ মে) প্রকাশিত এক ব্লগ পোস্টে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের জন্য চালু করা নতুন এই প্রোগ্রামের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে মেটা। এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে আগ্রহী স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ৩০ মে’র মধ্যে আবেদন করতে হবে বলেই ব্লগ পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘লামা ফর স্টার্টআপস’ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা
যেকোনো স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান চাইলেই ‘লামা ফর স্টার্টআপস’ প্রোগ্রামের অধীনে অর্থ সহায়তা পাবে না। সেজন্য নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ডে উৎরে যেতে হবে তাঁদেরকে। প্রথমত, স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটিকে অবশ্যই একটি কর্পোরেশন হিসেবে আমেরিকায় নিবন্ধিত হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম বিনিয়োগ থাকতে হবে প্রতিষ্ঠানটিতে। অর্থাৎ, কোনো স্টার্টআপ যদি ইতোমধ্যেই ১০ মিলিয়ন ডলার বা তার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ উত্তোলন করে থাকে তাহলে ‘লামা ফর স্টার্টআপস’ প্রোগ্রামের জন্য তাঁরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
তৃতীয়ত, স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের মধ্যে অন্তত একজন ডেভেলপার থাকতে হবে। চতুর্থত, প্রতিষ্ঠানটি জেনারেটিভ এআই (জেন এআই) প্রযুক্তির অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছে, এমন প্রমাণ দিতে হবে। এই চারটি মানদণ্ডে উত্তীর্ণ স্টার্টআপগুলো ‘লামা ফর স্টার্টআপস’ প্রোগ্রামের অধীনে অর্থ সহায়তা পেতে আগামী ৩০ মে তারিখের মধ্যে আবেদন করতে পারে।
কী ধরণের সহায়তা পাবে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো?
মেটার এই প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত প্রতিটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৬ হাজার মার্কিন ডলার করে ৬ মাস পর্যন্ত সরাসরি অর্থ সহায়তা পেতে পারে। এছাড়া লামা এআই মডেল-ভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সল্যুশন তৈরিতে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদান করবে মেটার বিশেষজ্ঞরা।
লামা এআই মডেল ব্যবহার করে কার্যকর ও উন্নত এআই অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতেও মেটার বিশেষজ্ঞরা স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সরাসরি কাজ করবে। পাশাপাশি লামা এআই মডেল দিয়ে উদ্ভাবনী সব অ্যাপ্লিকেশন তৈরির সম্ভাবনাগুলোও খতিয়ে দেখার সুযোগ পাবে নির্বাচিত স্টার্টআপগুলো। এভাবে করে স্টার্টআপগুলো গ্রাহকদের জন্য উন্নত এআই টুল নিয়ে আসতে পারবে এবং এর মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা প্রসারেরও সুযোগ পাবে তাঁরা।
লামা এআই মডেলটি নিয়ে মেটার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা রয়েছে। ওপেনসোর্স বা উন্মুক্ত উৎসের এই মডেলটি ইতোমধ্যেই ১ বিলিয়নের চেয়েও বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে। তবে গুগল, ডিপসিক, আলিবাবা’র কোয়েনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে বাজারে আধিপত্য বিস্তারের কাজটি যে সহজ নয় তা বেশ ভালো করেই জানে জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান। আর সে কারণেই লামা মডেলটির ব্যবহার বাড়াতে ‘লামা ফর স্টার্টআপস’ প্রোগ্রাম নিয়ে হাজির হয়েছে তাঁরা।
জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তিতে তৈরি বিভিন্ন টুল ও অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বাড়ানোর একটি আকর্ষণীয় খাত হচ্ছে এন্টারপ্রাইজ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়টি বিবেচনা করেই মেটা তাঁদের লামা মডেলটির বিস্তারে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেছে নিয়েছে। অভিনব এই উদ্যোগের মাধ্যমে লামা এআই মডেলটির একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চাইছে তাঁরা।
চলতি বছর জেনারেটিভ এআই-ভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য থেকে মেটা ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে আয়ের পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় তাঁরা।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে অদূর ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির এআই অ্যাসিসট্যান্ট টুল ‘মেটা এআই’-তে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু ফিচার অফার করে টুলটির একটি ভার্সন সাবসক্রিপশন ফি’র অধীনেও রাখা হতে পারে। বছরের প্রথম প্রান্তিকের আয়ব্যায়ের বিবরণী প্রকাশের অনুষ্ঠানে দেওয়া নিজের বক্তব্যে এমনটাই জানিয়েছেন জাকারবার্গ।
লামা এআই মডেল এবং লামা-ভিত্তিক বিভিন্ন টুল তৈরিতে ইতোমধ্যেই বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হয়েছে মেটার। গত বছর জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি খাতে তাঁদের বাজেট ছিল ৯০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। সংখ্যাটা এ বছর ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরে এআই প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে, বিশেষ করে ডেটা সেন্টার তৈরিতে চলতি বছর ৬০ থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলার খরচেরও পরিকল্পনা রয়েছে মেটার।
তথ্যসূত্র: মেটা, টেকক্রাঞ্চ