চীনের মানবসদৃশ (হিউম্যানয়েড) রোবট মানুষের জায়গা নেবে না বলে দাবি করেছে চীন। বেইজিংয়ের একটি প্রযুক্তি উন্নয়ন অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ এক কর্মকর্তা সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, চীনে তৈরি মানুষের মতো দেখতে রোবটগুলো মানব কর্মীদের জায়গা দখল করবে না, ফলে মানুষের চাকরি হারানোর ভয় নেই। এতে করে হিউম্যানয়েড রোবটের কারণে ব্যাপক বেকারত্বের সম্ভাবনাকেও নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।
চীনের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি হাবের একটির উপ-পরিচালক লিয়াং লিয়াং শুক্রবার (১৬ মে) বিদেশী গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, মানবসদৃশ (হিউম্যানয়েড) রোবট মানুষের জায়গা দখল করবে এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না। বরং এই রোবটগুলো উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশেও এগুলো কাজ করতে পারবে।
লিয়াং বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি না যে, রোবটের কারণে মানুষ বেকার হয়ে পড়বে, বরং এগুলো তাঁদের (উৎপাদন) সক্ষমতা বাড়াবে, অথবা এমন সব কাজ করবে যেগুলো করতে মানবকর্মীরা ইচ্ছুক নয়- যেমন বিশাল মহাবিশ্ব অথবা সমুদ্রের গভীরতা অন্বেষণ করা যেখানে মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। মেশিন আমাদের এই অনুসন্ধান অভিযানে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।’
উৎপাদনের ক্ষেত্রে হিউম্যানয়েড রোবট মানুষের সহায়ক হয়ে উঠবে দাবি করে লিয়াং আরও বলেন, ‘রাতের বেলা মানব কর্মীদের চাই বিশ্রাম, কিন্তু মেশিন তখনও কাজ করে যেতে পারে, এবং এর মধ্য দিয়ে আরও ভালো, সাশ্রয়ী ও আরও বেশি ব্যবহারকারী-বান্ধব পণ্য নিয়ে আসতে পারে। ফলে আমরা এটিকে আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের দিকনির্দেশনা হিসেবে দেখছি।’
চীনে সাম্প্রতিক সময়ে মানবসদৃশ বা হিউম্যানয়েড রোবটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই খাতে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে দেশটিতে, যার বড় একটি অংশই আসছে সরকারি কোষাগার থেকে। দেশটিতে হিউম্যানয়েড রোবটের বাজার সম্প্রসারণও হচ্ছে বেশ দ্রুত গতিতে।
বেইজিংয়ে গত মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বের প্রথম রোবট হাফ-ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা। আকর্ষণীয় এই ইভেন্টের প্রসঙ্গ টেনে লিয়াং বলেন যে, এই হাফ-ম্যারাথনটি ইচ্ছে করেই এমনভাবে আয়োজন করা হয়ছে যাতে করে এটা প্রমাণিত হয় যে হিউম্যানয়েড রোবটগুলো মানুষের সহায়ক হয়ে উঠবে। মানবকর্মীদের সরিয়ে দেবে না।
হাফ-ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতায় দুটি ট্র্যাক ছিল, যার মাঝে ছিল একটি রেলিং। দুটি ট্র্যাক রাখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ ও রোবটকে আলাদা করা। একটি ট্র্যাকে মানুষের প্রতিযোগিতা ছিল মানুষের সাথে, অন্যটিতে ২০টির মতো রোবট একেঅন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করেছে। আকার ও সক্ষমতার দিক থেকে রোবটগুলো একে অন্যের তুলনায় ভিন্ন ছিল। ম্যারাথনে যেমন মানুষ দৌড়েছে নিজেদের ট্র্যাকে, আর রোবট লড়েছে তাঁদের ট্র্যাকে, একইভাবে ভবিষ্যতেও মানুষ ও রোবট পাশাপাশি কাজ করবে, কেউ কারো জায়গা দখল করবে না বা কেউ কাউকে সরিয়ে দেবে না।
রাষ্ট্রসমর্থিত প্রতিষ্ঠান এক্স-হিউম্যানয়েড এর সদরদপ্তরে লিয়াং উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এক্স-হিউম্যানয়েড প্রতিষ্ঠানটি বেইজিং হিউম্যানয়েড রোবটিক্স ইনোভেশন সেন্টার নামেও পরিচিত। উল্লেখ্য, তাঁদের তৈরি রোবট তিয়ানগং আলট্রাই বিজয়ী হয়েছে রোবটদের হাফ-ম্যারাথনে।
তিয়ানগং আলট্রা মডেলটির সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ১২ কিলোমিটার। এটি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ করতে সক্ষম এমন সব রোবটের প্রোটোটাইপ প্রদর্শন করেছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, নিজেদের সংশোধন করার সক্ষমতা অর্জন করলে এই হিউম্যানয়েড রোবটগুলো দক্ষ ও কার্যকর কর্মীতে পরিণত হব।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স