সমুদ্রে তেল উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রায়শই দেখা যায় তেল ছড়িয়ে পড়ছে সমুদ্রের উপরিভাগের পানিতে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে প্রথম পদক্ষেপই হচ্ছে দ্রুততার সাথে তেল ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি শনাক্ত করা। কিন্তু এটি খুব সহজ কাজ নয়। এবারে গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার কথা জানিয়েছে নরওয়ের সামুদ্রিক (মেরিন) ডেটা বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান মিরোস গ্রুপ। সম্প্রতি (১৫ এপ্রিল) এমনটাই জানা গেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক ভিডিও প্রতিবেদন থেকে।
সমুদ্রের উপকূলে তেল উত্তলনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হচ্ছে সমুদ্রের পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়া রোধ করা, যাতে করে পানি দূষিত না হয় এবং খনিজ তেলেরও অপচয় না হয়। এই সমস্যার সমাধানে এখন এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সমুদ্রে তেল ও গ্যাস উত্তোলন ক্ষেত্রের (অফশোর ইন্সটলেশনের) চারপাশের অবস্থা মূল্যায়ন করে এআই জানিয়ে দিবে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়েছে কি-না এবং ছড়ালে সেটা ঠিক কোথায়।
এক্ষেত্রে জাহাজসহ বিভিন্ন সামুদ্রিকযানে ব্যবহৃত প্রচলিত রাডার ব্যবহার করা হবে। রাডার দিয়ে উত্তোলন ক্ষেত্রের চারপাশের এলাকা সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হবে। এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই এআই প্রযুক্তি সিদ্ধান্ত নেবে সমুদ্রের পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়েছে কি-না।
নরওয়ের মিরোস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মারিয়াস ফাইভ আর্সেট সমুদ্রের পানিতে তেল শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে রয়টার্সকে বিস্তারিত বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখি, যেটা অপারেটরদেরকে সম্ভাব্য তেল ছড়িয়ে পড়া সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিবে এবং জানাবে সমুদ্রের কোথায় তেল ছড়িয়ে পড়ছে যেখানে সমস্যা মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
যেমনটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সমুদ্রে তেল শনাক্তকরণ সিস্টেমটি প্রচলিত রাডারের সাহায্য নিয়ে থাকে। রাডারের মাধ্যমে সমুদ্রের উপরিভাগের ইমেজ বা ছবি তৈরি করা হয়। এরপর এআই প্রযুক্তি রাডারের সাহায্যে তোলা এই ছবি বিশ্লেষণ করে সমুদ্রে ঢেউয়ের পরিমাপ মূল্যায়ন করে থাকে। সমুদ্রের পানিতে যেখানে তেল ছড়িয়ে পড়ে সেখানে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ভারি হয়ে যায়, ফলে বাতাসের কারণে সৃষ্ট স্বাভাবিক ঢেউ দেখা যায় না। অর্থাৎ, তেল ছড়িয়ে পড়া অংশে ঢেউ অপেক্ষাকৃত শান্ত হয়ে আসে এবং পানির উপরিভাগ মসৃণ বা ফ্ল্যাট দেখায়।
রাডার দিয়ে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানিতে ঠিক এরকমই অপেক্ষাকৃত শান্ত ও মসৃণ (ফ্ল্যাট) অঞ্চল শনাক্ত করবে এআই প্রযুক্তি। শান্ত ঢেউয়ের মসৃণ এলাকা খুঁজে পেলেই এআই সেটা অপারেটরদের জানিয়ে দেবে।
মিরোস গ্রুপের এআই সক্ষমতাসম্পন্ন সিস্টেমটি অপেক্ষাকৃত শান্ত ঢেউ ও মসৃণ এলাকা শনাক্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও তার পরিধিও মূল্যায়ন করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির এআই সক্ষমতা অবশ্য এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। সমুদ্রে তেল উত্তোলন ক্ষেত্রের আশেপাশে ঢেউয়ের উচ্চতা ও গতি বিশ্লেষণ করে মিরোসের এআই প্রযুক্তি আসন্ন ঢেউয়ের উচ্চতা ও আগমনের সময় সম্পর্কেও অনুমান করতে পারে, পূর্বাভাস দিতে পারে।
এ সম্পর্কে মিরোসের প্রধান নির্বাহী আর্সেট বলেন, ‘...আপনাকে বলা হচ্ছে যে দুই মিনিটের মধ্যে চার মিটার উঁচু একটি ঢেউ আসছে এবং এর ফলে আপনার জাহাজ তিন মিটার ওপরনিচে কেঁপে উঠবে।’ এই সিস্টেম তৈরিতে সাম্প্রতিক এআই ও কম্পিউটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সমুদ্রের পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়ার সমস্যা মোকাবেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্ভুলভাবে বিষয়টি শনাক্ত করা। পাশাপাশি দক্ষতার সাথে নিরাপদে তেল উত্তোলনের ক্ষেত্রেও নির্ভুল তথ্য ও ডেটার গুরুত্ব অপরিসীম। মিরোস ঠিক এই উদ্দেশ্যেই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স