চাঁদের খুব কাছ থেকে ধারণ করা চন্দ্রপৃষ্ঠের চমৎকার কিছু ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়েছে ব্লু ঘোস্ট নামের একটি মহাকাশযান। চাঁদের মোটামুটি ১০০ কিলোমিটার ওপর দিয়ে প্রদক্ষিণের সময় এই ফুটেজগুলো ধারণ করেছে ব্লু ঘোস্ট মুন ল্যান্ডারটি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) এই ভিডিও প্রকাশ করেছে মহাকাশযানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আমেরিকান বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস।
ভিডিও’তে দেখা যাচ্ছে, ব্লু ঘোস্ট চাঁদের মাটিতে অবতরণের প্রস্তুতিস্বরুপ চাঁদের খুব কাছ দিয়ে প্রদক্ষিণ করছে। প্রদক্ষিণকালীন ধারণ করা ভিডিওতে গাঢ় ধূসর রঙের চন্দ্রপৃষ্ঠ পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। এছাড়া চাঁদের দূরবর্তী অংশ এবং মহাকাশযানটির আরসিএস (রিঅ্যাকশন কন্ট্রোল সিস্টেম) থ্রাস্টার ও দু’পাশের দুটি রেডিয়েটর প্যানেলও ধরা পড়েছে ভিডিও’তে। মহাকাশযানটির সাবসিস্টেমকে চরম তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করতে স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস-এর দুটি ‘মুন ল্যান্ডার’ মহাকাশযানের একটি হচ্ছে এই ব্লু ঘোস্ট। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র তৈরি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম চাঁদের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দিতে ব্যবহৃত হয় এই দুটি মুন ল্যান্ডার। বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জামাদি পৌঁছে দেওয়ার এই কাজটি নাসা’র কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিসেস বা সিএলপিএস উদ্যোগের অংশ হিসেবে করা হয়ে থাকে।
নাসা তাঁদের কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিসেস (সিএলপিএস) উদ্যোগের অধীনে সাশ্রয়ী ও কার্যকর উপায়ে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার (বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জামাদি) চন্দ্রপৃষ্ঠে পৌঁছাতে চায়। এই লক্ষ্যে তাঁরা আমেরিকান বিভিন্ন বেসরকারি মহাকাশ সংস্থার সাথে কাজ করছে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে টেক্সাসভিত্তিক ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস।
ব্লু ঘোস্ট ল্যান্ডার মডিউলটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ১০টি সরঞ্জাম বহন করছে। এই সরঞ্জামগুলোর সাহায্যে নাসা চাঁদের কাছের দিকে থাকা মারে ক্রিসিয়াম বা সংকট সাগর নামক বড় আকারের একটি ব্যাসল্ট ভর্তি গর্ত থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। ব্যাসল্ট হচ্ছে গাঢ় ধূসর রঙের এক প্রকার আগ্নেয় শিলা।
ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস নাসার জন্য চাঁদে মোট ৩টি মিশন পরিচালনা করবে, যার মধ্যে এবারেরটি প্রথম। ‘ব্লু ঘোস্ট মিশন ১’ নামের এই মিশনটি গত ১৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছে। এই মিশনের অধীনে আগামী ২ মার্চ চাঁদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মারে ক্রিসিয়াম অঞ্চলে অবতরণ করবে ব্লু ঘোস্ট মুন ল্যান্ডারটি।
নাসার জন্য ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের দ্বিতীয় মিশনটি ২০২৬ সালে শুরু হওয়ার কথা। দ্বিতীয় মিশনে চাঁদের দূরবর্তী অংশে একটি ল্যান্ডার স্থাপন করা হবে। এরপর ২০২৮ সালে তৃতীয় মিশনে চাঁদের কাছের দিকে থাকা রহস্যময় গ্রুইথুইসেন ডোম অন্বেষণ করার জন্য একটি রোভার পাঠানো হবে। তিনটি মিশনই নাসাকে চাঁদে একটি স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপনের মতো দীর্ঘমেয়াদে চাঁদে বসবাসের সম্ভাবনা মূল্যায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, সায়েন্স অ্যালার্ট