ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)-এর তৈরি ‘হেরা’ নামক মহাকাশযানটি গত বুধবার (১২ মার্চ) মঙ্গল গ্রহের খুব কাছ দিয়ে উড়ে গেছে। মঙ্গলের ৫ হাজার কিলোমিটার দূর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় হেরা এই লাল গ্রহটির চমৎকার কিছু ছবি ক্যামেরাবন্দী করেছে। বৃহস্পতিবার জার্মানির ডামস্ড্যাট শহরে ছবিগুলো প্রকাশ করেছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি।
অবশ্য ‘হেরা’ মহাকাশযানটিকে (প্রোব) মঙ্গলের কাছাকাছি পাঠানোর উদ্দেশ্য কেবলমাত্র গ্রহটির ছবি তোলা নয়। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহাকাশে বিদ্যমান অসংখ্য গ্রহাণুর সম্ভাব্য আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে একটি কার্যকর প্রতিরক্ষা বা সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
হেরা গ্রহাণু মিশনের প্রোজেক্ট ম্যানেজার ইয়ান কার্নেলি বলেছেন যে, মঙ্গল গ্রহের কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার কারণে হেরা মহাকাশযানটিকে ডিমরফোস ও বৃহত্তর ডিডাইমোস নামক দুটি গ্রহাণুর দিকে স্লিংশট করা হয়েছে, অর্থাৎ আরও দ্রুত গতিতে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, স্লিংশট (slingshot) বলতে এখানে মহাকর্ষীয় অ্যাসিস্ট বা সহায়তার কথা বলা হয়েছে, যেখানে একটি গ্রহের মহাকর্ষ ব্যবহার করে মহাকাশযানের গতি ও দিক পরিবর্তন করা হয়।
ছবিগুলোতে মঙ্গলের পৃষ্ঠ এবং গ্রহটির দুটি চাঁদের একটি ডেইমোসকে দেখা গেছে। হেরা মহাকাশযানের পাঠানো ছবিগুলোর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর আগে মঙ্গলপৃষ্ঠের ও এর চাঁদের ছবি কেউ তোলেনি। অন্তত কার্নেলি এমনটাই দাবি করছেন।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) চাইছে হেরা গ্রহাণু মিশনের মাধ্যমে একটি মডেল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো গ্রহাণুর সম্ভাব্য আঘাত থেকে পৃথিবীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। ইএসএ’র মহাকাশ বিজ্ঞানীরা হেরা মহাকাশযানটির পাঠানো ছবি, ভিডিও ও বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন একটি নিরাপদ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে চান যেখানে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা কোনো গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তন (ডিফ্লেকশন) করে দেওয়া যাবে।
গ্রহাণুকে ডিফ্লেক্ট করা বা এর গতিপথ পরিবর্তন করার কারণে অন্য কোনো ক্ষতির ঝুঁকি আছে কিনা এবং এটা কতটা নিরাপদে করা সম্ভব- এ নিয়ে উচ্চতর গবেষণার উদ্দেশ্যেই হেরাকে মহাকাশে পাঠিয়েছে ইএসএ। ডিফ্লেকশন পদ্ধতিটি কার্যকর প্রমাণিত হলে গ্রহাণুর বিরুদ্ধে পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে গৃহীত হবে এটি।
পৃথিবীর সৌরজগতে ১০ কোটি বা ১০০ মিলিয়নেরও বেশি গ্রহাণু রয়েছে, যার মধ্যে কিছু গ্রহাণু অনেক সময় পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে। ইতিহাসে দেখা গেছে যে, বিভিন্ন সময় গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত করেছে।
এ প্রসঙ্গে কার্নেলি বলেন, ‘“ডাইনোসরের হত্যাকারী” ৯০ শতাংশেরও বেশি গ্রহাণু সম্পর্কে আজ আমরা জানি এবং এগুলো নিয়ে আমরা ভীত নই। আমরা জানি যে এগুলোর কোনোটিই পৃথিবীতে আঘাত করবে না, তবে ১০০ মিটারের ছোট গ্রহাণুগুলো চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। বর্তমানে আমরা ৩০ হাজার গ্রহাণুকে সম্ভাব্য বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করে পর্যবেক্ষণ করছি।’
মহাকাশ থেকে উড়ে এসে কখন একটি গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করবে সেটা জানতে হলে চাই নিরচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ। সেটাই নিয়মিত করে চলেছে নাসা, ইএসএ-এর মতো মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো। তবে শুধু পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট নয়।
কার্নেলি মনে করেন, পৃথিবীর জন্য বীমা পলিসি’র মতো একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা উচিত। ভবিষ্যতে পৃথিবীবাসী যাতে নিরাপদ থাকতে পারে সে লক্ষ্যে একটি প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির হেরা গ্রহাণু মিশন।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স