মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহেই জানিয়েছেন যে, চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম টিকটকের আমেরিকা অংশের মালিকানা বিক্রির জন্য ‘এক দল ধনী ব্যক্তিকে’ ক্রেতা হিসেবে পাওয়া গেছে। তবে এই চুক্তির বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে চীন সরকারের অনুমোদন। এবারে গত শুক্রবার ট্রাম্প জানালেন, এ সপ্তাহেই টিকটক ইস্যুতে চীনের শি জিনপিং সরকারের সাথে আলোচনা করতে যাচ্ছে তাঁর সরকার।
শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে উপস্থিতি সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন যে, টিকটক বিক্রির বিষয়ে আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার চীন সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে আমেরিকা।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা সোমবার বা মঙ্গলবার (আলোচনা) শুরু করতে যাচ্ছি…চীনের সাথে- হয়তো প্রেসিডেন্ট শি অথবা তাঁর কোনো প্রতিনিধির সাথে- কিন্তু চুক্তি বলতে গেলে তৈরিই আছে আমাদের।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এও বলেছেন যে, তিনি হয়তো প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সাথে দেখা করতে চীন সফরে যাবেন। আবার চীনা প্রেসিডন্টের আমেরিকা সফরে আসার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, গত মাসেই দেশ দুটির প্রেসিডেন্ট একেঅন্যকে তাঁদের নিজ নিজ দেশে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
গত বছর থেকেই আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া টিকটক। স্বল্পদৈর্ঘ্যের এই ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটির ১৭ কোটি ব্যবহারকারী আছে আমেরিকায়। পূর্বতন বাইডেন-সরকার প্রণীত আইনে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে টিকটক দেশটিতে সক্রিয় থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে গত বছর থেকেই।
টিকটককে আমেরিকায় ব্যবসা করতে হলে মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স-কে অ্যাপটির আমেরিকা অংশের ব্যবসায়ের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে আমেরিকান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে। অর্থাৎ, আমেরিকা অংশের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণমূলক মালিকানা তাঁদেরকে আমেরিকান কোনো ক্রেতার কাছেই বিক্রি করে দিতে হবে।
বাইটড্যান্স তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় জানুয়ারিতেই আমেরিকায় নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছিল টিকটক। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে এখন পর্যন্ত পর পর তিনবার টিকটক নিষিদ্ধের সময়সীমা পিছিয়েছে আমেরিকা। সর্বশেষ গত মাসে (১৯ জুন) ৯০ দিনের জন্য টিকটিকের নিষেধাজ্ঞা পিছিয়ে দেন ট্রাম্প। সে হিসেবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের টিকটকের আমেরিকা অংশের নিয়ন্ত্রণমূলক মালিকানা বিক্রি করতে হবে বাইটড্যান্সকে।
অবশ্য এই সময়সীমার অনেক আগেই বিষয়টির সুরাহা হয়ে যেতে পারে যদি চীনের শি জিনপিং সরকার টিকটকের আমেরিকা অংশের মালিকানা হস্তান্তর সম্পর্কিত চুক্তিতে অনুমোদন দেন। উল্লেখ্য, গত এপ্রিলেও টিকটক বিক্রি সম্পর্কিত চুক্তি সম্পাদন একেবারে শেষ পর্যায়ে ছিল, কিন্তু ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে চীন স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় তাঁরা টিকটক বিক্রি সম্পর্কিত চুক্তিতে অনুমোদন দিচ্ছে না।
উল্লেখ্য, চীনের আইন অনুযায়ী, সংবেদনশীল প্রযুক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীন সরকারের অনুমতি নিতে হবে। সরকারের অনুমোদন না পেলে তাঁরা এ ধরণের চুক্তি করতে পারবে না। টিকটকের আমেরিকা অংশের মালিকানা বিক্রির অর্থ হচ্ছে, অ্যাপটি’র রিকমেন্ডেশন অ্যালগরিদমের অ্যাক্সেস পেয়ে যাবে আমেরিকান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। এমন সংবেদনশীল প্রযুক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে চীন সরকারের অনুমোদন প্রাপ্তি বাধ্যতামূলক।
পাল্টা শুল্ক আরোপের পর গত প্রায় তিন মাসে চীনের সাথে সম্পর্ক কিছুটা হলেও ভালো ও স্থিতিশীল হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, টিকটকের চুক্তিতে চীনের অনুমোদন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি কতটা আত্মবিশ্বাসী। প্রত্যুত্তরে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী না হলেও আশা করি এমনটাই হবে। প্রেসিডেন্ট শি’র সাথে আমার সম্পর্ক বেশ ভালো, এবং আমি মনে করি এটা তাঁদের জন্যেও ভালো হবে। আমি মনে করি এই চুক্তি চীনে জন্যেও ভালো এবং আমাদের জন্যেও ভালো।’
এখন দেখার বিষয় চীন-মার্কিন দ্বৈরথে টিকটক বিড়ম্বনার শেষ কোথায়।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান