সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওপেনারদের ফর্ম। জিম্বাবুয়ে সিরিজে সেটি প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। প্রথম তিন ম্যাচে ওপেনিংয়ে তানজিদ হাসান তামিম-লিটন দাস জুটি ব্যর্থ হওয়ার পরে শেষ দুই ম্যাচে তামিম-সৌম্য জুটির ওপর ভরসা রাখে বাংলাদেশ। কিন্তু এক ম্যাচে সেঞ্চুরি জুটি গড়লেও পরের ম্যাচেই পুরোনো রূপে ফিরে যান ওপেনাররা।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সৌম্য-লিটনকে ওপেনিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। কিন্তু ফলাফল সেই একই। কেবল যে ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হচ্ছে, এমন নয়। সম্প্রতি টপ অর্ডারে ব্যাটসম্যানদের রানখরা পরিচিত দৃশ্য হয়েছে বাংলাদেশ দলে। বিশ্বকাপের আগে ব্যাটিংয়ে এমন বাজে হাল দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫৩ রান তুলতে পেরেছিলেন শান্তরা। এ ম্যাচে শান্ত, সৌম্য, সাকিব ও লিটন- টপ অর্ডারের চারজন মিলে করেছেন ৪৩ রান, সেটাও ৫১ বলে। যা টি-টোয়েন্টির সঙ্গে বড্ড বেমানান।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শান্তকে স্ট্রাইকরেট প্রসঙ্গেই প্রশ্ন করলেন ক্রিকবাজের সাংবাদিক স্মিথ। তিনি সর্বশেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ওপেনারদের স্ট্রাইকরেটের কথা মনে করিয়ে দিয়ে এ ব্যাপারে শান্তর মন্তব্য জানতে চান।
স্মিথ প্রশ্ন করেন, গত পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ওপেনারদের স্ট্রাইকরেট ৯৮.৩৩। আসন্ন বিশ্বকাপে এর পরিবর্তন হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশি অধিনায়ক বলেছেন, ‘অবশ্যই। সব সময় উন্নতি হচ্ছে। ব্যাটসম্যানরা এ দিকটাকে নজর দিচ্ছে এবং স্কিল বাড়াতে কাজ করছে। আমি আশা করছি, এ বিশ্বকাপে (ব্যাটসম্যানরা) ভালো করবে।’
স্মিথের তথ্যে অবশ্য ভুল আছে। ২০১২ থেকে ২০২২ বিশ্বকাপ-এই পাঁচ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে নেমে নয় ওপেনার ১১৫.৩৮ স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন। আর ওপেনিং জুটি রান করেছে ১১৩ স্ট্রাইকরেটে। ৯৮ এর আশপাশে স্ট্রাইকরেট শুধু সৌম্য সরকারের। ৯ ইনিংসে ৮২ রান করা এই ওপেনারের স্ট্রাইকরেট ৯৮.৭৯।
স্মিথের পরিসংখ্যান ভুল হলেও প্রশ্নটা যৌক্তিক। কারণ, গত পাঁচটি বিশ্বকাপে নিয়মিত অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের ওপেনারদের স্ট্রাইকরেট বাংলাদেশের চেয়ে কম।
বাংলাদেশের তুলনায় শক্তিতে কিংবা অভিজ্ঞতায় যোজন যোজন পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গতকালই প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছে দুদল। ক্রিকেটের নবীনতম দলের বিপক্ষে হারের কারণ হিসেবে ব্যাটসম্যানদের রানখরাকেই দুষলেন শান্ত।
বাংলাদেশি অধিনায়কের ভাষায়, ‘আমার মনে হয়, আমরা ব্যাটিংটা ঠিকঠাক করতে পারিনি। বিশেষ করে মিডল ওভারে আমরা উইকেট হারিয়েছি। আমার মতে, আমরা শুরুটা ভালো করেছিলাম। কিন্তু সেভাবে শেষটা করতে পারিনি।’
ব্যাটসম্যানদের এমন রানখরাতেও দুশ্চিন্তায় নেই বাংলাদেশ দল। পরের ম্যাচ থেকে ভালো করার আশার বাণী শোনালেন শান্ত, ‘দুশ্চিন্তার কিছু নেই। প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যান তাদের স্কিল নিয়ে কাজ করছে। আমরা সবাই জানি, টপ অর্ডারদের ভালো খেলতে হবে। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে এটা আমাদের সবারই দায়িত্ব। ব্যাটসম্যানরা এটা নিয়ে কাজ করছে। এটা ঠিক যে, আমরা এ জায়গাটায় বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ করছি। কিন্তু আমি আশা করব, সামনের ম্যাচ থেকে ভালো ভাবে কামব্যাক করব।’
সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে ওপেনিংয়ে ভালো করেছেন কেবল তানজিদ তামিম। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচে একাদশেই জায়গা হয়নি তরুণ এ ওপেনারের। এ প্রসঙ্গে শান্ত জানালেন, তামিমকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল, ‘ওকে (তামিমকে) বাদ দেওয়া হয়নি। আমাদের যে তিনজন ওপেনার আছে, সবাইকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলার একটা পরিকল্পনা ছিল। আজকে ওকে (তামিমকে) বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। কারণ সৌম্য অনেকদিন ধরে ইনজুরির মধ্যে ছিল। ম্যাচ খুব একটা খেলেনি। এজন্য এ পরিকল্পনা করা হয়েছে।’