ওয়ানডে সিরিজটা ভালোই কেটেছে তাঁর, প্রথম তিন ম্যাচে তেমন কিছু করতে না পারলেও শেষ দুই ম্যাচে দুটি ফিফটি পেয়েছেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে নেমেই আজ বাবর আজম মুদ্রার দুই দিকই দেখে ফেললেন, সেটাও মাত্র ৪ রানের ইনিংসে!
চার রানের একটা ইনিংস, তাতে আবার মুদ্রার পিঠের হিসাব কীসের? যেখানে কিনা পুরো দলে এক অঙ্কে আউট হওয়া দুই ব্যাটসম্যানের একজন বাবর (অন্যজন বোলার নাসিম শাহ্)! তবু আজ ১১ বলে ৪ রানের ইনিংসেই বাবর দুই ধরনের শিরোনামে।
এক, ওই চার রানেই টেস্টে ৪ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়ে গেছেন বাবর! মাইলফলক ছুঁতে তাঁর দরকার ছিল ৩ রান, মুখোমুখি প্রথম বলেই চার মেরে সে হিসেব চুকিয়ে দেন পাকিস্তান ব্যাটসম্যান। আর দ্বিতীয় ধরনের শিরোনাম তাঁর আউটের ধরনের কারণে। যেন বিরাট কোহলিকে ‘কপি’ করলেন বাবর! অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের সিরিজে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে আউট হওয়ার যে ভুতে পেয়ে বসেছে কোহলিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেইন পেটারসনের বলে আজ সেভাবেই আউট হলেন বাবর!
বাবরের বাইরে বাকি ‘ব্যাটসম্যানরা’ সবাই দুই অঙ্কে গেলেও খুব বেশি রান অবশ্য কারও কাছ থেকেই পায়নি পাকিস্তান। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামতে হওয়ার পর এক কামরান গুলাম ছাড়া কেউই শুরুটাকে টেনে নিতে পারেননি। কামরান শেষ পর্যন্ত ৫৪ রান করেছেন, বাকি কারও রান ৩০-এর ঘরেই যায়নি। ২০-এর ঘরেই গেছেন শুধু অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান (২৭) আর আমের জামাল (২৮)।
শেষ পর্যন্ত ৫৭.৩ ওভারে ২১১ রানে অলআউট হয়ে গেছে পাকিস্তান। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকাও যে খুব একটা ভালো করেছে এমন নয়। দিন শেষের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। ২২ ওভারে ৩ উইকেটে ৮২ রান নিয়ে যে দিন শেষ করতে পেরেছে প্রোটিয়ারা, সেটাও ওপেনিংয়ে নেমে দিনের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত এইডেন মার্করামের ৪৭ রানের সৌজন্যে। টনি ডি জর্জি, রায়ান রিকেলটন, ট্রিস্টান স্টাবসরা এক অঙ্কেই আউট। দিন শেষে মার্করামের সঙ্গে ব্যাটিং করছিলেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা (৪*)।
দিনের প্রথম ঘণ্টাটা ভালোভাবেই কাটিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু দ্বিতীয় ঘণ্টায় যেতেই ঝামেলা পাকিয়ে ফেলল। ৩৬ রান এনে দেওয়া ওপেনিং জুটির পর শান মাসুদ (১৭) বিদায় নিতেই প্রথম দফায় ভাঙন পাকিস্তান ইনিংসে, ওই এক ঘণ্টায়ই গেল ৪ উইকেট। টেস্ট অভিষেকের দিনেই ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়ার পথে করবিন বশ ফিরিয়েছিলেন মাসুদকে, এরপর পেটারসন একে একে বাবরের আগে-পরে ফেরান আরেক ওপেনার সায়েম আইয়ুব (১৪) আর সউদ শাকিলকে (৬ বলে ৩ চারে ১৪)।
দেখতে দেখতেই ৫৬/৪ হয়ে যাওয়া পাকিস্তান লাঞ্চ ব্রেকের আগে যে আর উইকেট হারায়নি, সেটা পঞ্চম উইকেটে রিজওয়ানের সঙ্গে কামরানের প্রতিরোধের কারণে। শেষ পর্যন্ত ১১৭ বলে ৮১ রান এনে দেওয়া জুটিটাতে শুরুতে ভাগ্যকে পাশে পাওয়া কামরান বেশ আগ্রাসীই ছিলেন, লাঞ্চের কিছুক্ষণ পরে তাঁর ফিফটি পূর্ণ হয়ে যায় ৫২ বলে (৮ চার ১ ছক্কায়)। কিন্তু ফিফটি পাওয়ার পর কেন যেন ঢুকে গেলেন খোলসে।
তাতে উল্টো ক্ষতিই বুঝি হলো! শেষ পর্যন্ত ৭১ বলে ৫৪ রান করে কামরান আউট হলেন, পাকিস্তান আবার পড়ল আরেক দফা ধসের মুখে। কামরানের ১২ বল পর রিজওয়ানও আউট।
এরপর আমের জামাল আর সালমান আলী আগা (১৮) সপ্তম উইকেটে ৪৭ রানের জুটিতে আবার কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেন। কিন্তু ওই জুটিতে ২০০ পার হওয়ার আশা আর পূরণ তো হলোই না, উল্টো ২০০ হতে হতে আমের, সালমানের পর নাসিম শাহরও বিদায় দেখে অলআউট হওয়ার এক উইকেট দূরত্বে থেকে চা বিরতিতে গেল পাকিস্তান। ৯ উইকেটে ২০৯ রান নিয়ে বিরতিতে গেল, বিরতি থেকে ফিরে ২ রান যোগ করতেই অলআউট।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে পেটারসন ৫ উইকেট নিয়েছেন, বশ তো ৪ উইকেট নিয়েছেনই, শেষ উইকেটটি মার্কো ইয়ানসেনের। অথচ ইনিংসে দারুণ বোলিং করা কাগিসো রাবাদা উইকেট পাননি!
তা রান খুব বেশি করতে না পারলেও দিন শেষে পাকিস্তান যে একেবারে অস্বস্তিতে ভেসে যায়নি, সে কৃতিত্ব বোলারদের – বিশেষ করে উইকেট তিনটি নেওয়া দুই বোলার খুররম শেহজাদ (২ উইকেট) আর মোহাম্মদ আব্বাসের।