ওয়ানডে অভিষেকেও পাকিস্তানকে ভুগিয়েছিলেন। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে তিনি ৪০ রানে অপরাজিত থাকলেও অন্য প্রান্ত থেকে সমর্থন না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সেদিন অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে জেতাতে পারেননি। এরপর টেস্টে অভিষেকেও গতকাল প্রথম দিনে বল হাতে ৪ উইকেট নিয়েছেন করবিন বশ, এরপর আজ ব্যাট হাতে পাকিস্তানকে বশ মানতে বাধ্য করালেন।
সে পথে রেকর্ডও গড়ে ফেললেন। সেঞ্চুরিয়নে গতকাল প্রথম দিনেই পাকিস্তানকে প্রথম ইনিংসে ২১১ রানে অলআউট করা দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ পর্যন্ত ৩০১ রানে অলআউট হয়েছে, সে পথে ৮১ রান করে অপরাজিত ছিলেন ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা বশ। অভিষেকে ৪ উইকেট আর পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসের এমন কীর্তি দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে আর কারও নেই। এ তো গেল দক্ষিণ আফ্রিকার হিসাব, বৈশ্বিক একটা ছোট্ট রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন বশ। টেস্ট অভিষেকে ৯ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটা এখন তাঁর। ভেঙে দিয়েছেন গত আগস্টেই ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মিলান রত্নায়েকের ৭২ রানের রেকর্ড।
তবে রেকর্ডের চেয়েও ৩০ বছর বয়সী অলরাউন্ডারকে যা সম্ভবত বেশি তৃপ্তি দেবে, তা হলো, বশের ‘বসগিরি’তে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে কিছুটা দাপুটে অবস্থানে যেতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাঁর ইনিংসটাই যে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ৯০ রানের লিড নিতে পারার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে!
গতকাল দিন শেষের আগেই ৮২ রানের বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানের বোলাররা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, স্কোরবোর্ডে তাঁদের ব্যাটসম্যানরা একেবারে আহামরি রান তুলতে না পারলেও বোলাররা পাল্টা জবাব দিতে তৈরি। আজ দ্বিতীয় দিনেও একপ্রান্তে এইডেন মার্করাম দাঁড়িয়ে থাকলেও অন্য প্রান্তে খুব বেশি সাহায্য করতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার অন্য ব্যাটসম্যানরা। ৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা টেম্বা বাভুমা আউট হলেন ৩১ রান করে, ৩০ করে আউট এর পরের ব্যাটসম্যান ডেভিড বেডিংহ্যামও। এরপর কাইল ভেরেইরা আর মার্কো ইয়ানসেনও যখন আউট হলেন, তখনো দক্ষিণ আফ্রিকার রান ১৯১!
এক প্রান্তে মার্করাম অবশ্য তখনো ছিলেন। আগের দিনের ৪৭ রানকে আজ সকালে শুরুতেই ফিফটিতে পরিণত করেছিলেন, ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। বশের সঙ্গে মিলে দলকে ২০০ পার করালেন, পাকিস্তানের ২১১ রানও দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়িয়ে গেল ওই জুটিতে। কিন্তু দলকে ২১৩ রানে রেখে মার্করামও আউট হয়ে গেলেন! তাঁর ১৪৪ বলে ১৫ চারে সাজানো ইনিংসটা সেঞ্চুরিতে পূর্ণতা পেল না ১১ রানের জন্য, পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা তখন মাত্র ২ রানের লিড নিয়ে কাঁপছে – এই বুঝি পাকিস্তানকে অল্প রানে আটকে রাখার সুবিধাটা হাতছাড়া হয়ে গেল! উইকেট যে তখন আর মাত্র দুটি বাকি!
সেখান থেকেই দাঁড়িয়ে গেলেন বশ! আগ্রাসী ব্যাটিংই করলেন, ৪৬ বলে (১০ চারে) ছুঁয়ে ফেললেন ফিফটি। নবম উইকেটে কাগিসো রাবাদার (১৩) সঙ্গে গড়লেন ৪১ রানের জুটি, দশম উইকেটে ডেইন পেটারসনের (১২) সঙ্গে তাঁর জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা পেল আরও ৪৭ রান! শেষ পর্যন্ত পেটারসন আউট হয়ে যাওয়াতে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০০ পেরিয়েই থেমেছে। দলের লিডটা আরও বড় করতে না পারার পাশাপাশি বশের একটু আক্ষেপ থেকে গেল, সঙ্গে কেউ একজন টিকে থাকলেই হয়তো ৯৩ বলে ১৫ চারে সাজানো ইনিংসটা সেঞ্চুরি দেখে ফেলত!
এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪ ওভারে সায়েম আইয়ুবের (২৮) উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৬০ রান। ক্রিজে শান মাসুদের (২৬) সঙ্গী বাবর আজম (২)।