পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের পর প্রশ্নটা জেগেছিল পিচ নিয়ে – পিচ একই আছে তো? না হলে যে পিচে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৬১৫ রান করেছিল, সে পিচে পাকিস্তান ১৯৪ রানেই কীভাবে অলআউট হয়!
সেটা ছিল কেপটাউন টেস্টে আজ তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ভাগের কথা।
কিন্তু ফলো অনে পড়ে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৯ ওভার দেখে যখন দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হলো, তখন প্রশ্নটা পাল্টে হয়ে গেল – পাকিস্তান দলটা একই আছে তো?
প্রশ্ন জাগবে না-ইবা কেন! যে পাকিস্তান আজ দিনের প্রথম ভাগে ছিল একেবারে অসহায়, প্রথম ইনিংসে ৪২১ রান পিছিয়ে পড়েছিল, সেই পাকিস্তানই যে দ্বিতীয় ইনিংসে অবিশ্বাস্যরকম দাপুটে! ওপেনিং জুটিতেই প্রথম ইনিংসের মোট রানের চেয়ে ১১ রান বেশি তুলে ফেলল – যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পাকিস্তানের রেকর্ড ওপেনিং জুটি। দিনের শেষ বেলায় বাবর আজম আউট না হলে ১০ উইকেট অক্ষত রেখেই কাল চতুর্থ দিনে নামতে পারত।
হাতে উইকেট একটা কম নিয়ে নামলেও কাল চতুর্থ দিনে নামার আগে পাকিস্তান আজকের দিনের দ্বিতীয় ভাগে তাকিয়ে গর্ব না করে পারে না! এক ইনিংস দেরি হয়ে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে যে যথাযথ পাল্টা জবাব দেওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে তারা! দিন শেষ করেছে ১ উইকেটে ২১৩ রান নিয়ে। বাবর ৮১ রান করে আউট হয়ে গেলেও ওপেনিংয়ে তাঁর সঙ্গী অধিনায়ক শান মাসুদ অপরাজিত ১০২ রান করে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম ইনিংস শেষের ব্যবধানটাকেও অর্ধেকের বেশি কমিয়ে ফেলেছে তারা, দক্ষিণ আফ্রিকার লিড এখন ২০৮ রানের।
দক্ষিণ আফ্রিকা কি পাকিস্তানকে ফলো-অন না করিয়ে নিজেরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা উচিত ছিল? প্রশ্নটা এখন উঠছে বটে, যদিও সেটিকে পাকিস্তানের ইনিংসের গতিপথ দেখার পরের হঠাৎ জেগে ওঠা প্রশ্ন বলে ধরে নেওয়াই সম্ভবত যুক্তিসঙ্গত। ঘটনা ঘটার পর তো অনেক বিশ্লেষণই করা যায়! তবে যাঁরা প্রশ্নটা করছেন, তাঁদের মনে প্রশ্নটা সম্ভবত জাগছে দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং দেখে।
কাগিসো রাবাদা যা কিছুটা ভালো বোলিং করেছেন বলা যায়, বাকি পেসারদের যেন ক্লান্তি পেয়ে বসেছে। অনেক বেশিই মারের মতো বল দিয়েছেন, লেংথেও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। স্পিনার কেশব মহারাজ রান কম দিলেও ভয়ংকর হয়ে ওঠার মতো ঘূর্ণি পিচ থেকে আদায় করে নিতে ব্যর্থ। বাবর-মাসুদ সেটার সুবিধা নিয়েছেন দুহাতে। ইনিংসজুড়ে ওভারপ্রতি ৪-এর ওপরে রান নিয়েছেন দুজন।
লাঞ্চের কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছিল, ইনিংস বিরতিতে গেছে মিনিট দশেক। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে নামা পাকিস্তান চা বিরতির আগে ১৭ ওভারেই তুলে ফেলে ৮১ রান। দলীয় ১০০ রান হয়ে যায় ইনিংসের ২২তম ওভারেই, ১৫০ হলো ৩৫তম ওভারে, ৪৫ ওভারে ২০০…যেন এ শতকের শুরুর সময়ের কোনো ওয়ানডে ম্যাচ!
দলের রান ১০০ পেরোনোর কিছুক্ষণ পর শান মাসুদ ফিফটিতে পৌঁছান ৭০ বলে (৮ চারে), এর কিছুক্ষণ পর বাবর (৭৩ বলে ৬ চারে)। দিনের যখন আর ওভার কয়েক বাকি, তখন তো মনে হচ্ছিল, দুজনই সেঞ্চুরি পেয়ে যাবেন। মাসুদ তা করে ফেলেছেন ৪৫তম ওভারের শেষ বলে। মার্কো ইয়ানসেনকে চার মেরে দলের ২০০ আর নিজের ১০০ (১৫৯ বলে ১৪ চারে) পূরণ করেন।
কিন্তু ইয়ানসেনের এর পরের ওভারেই ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাবর। আজই প্রথম ইনিংসে ফিফটি পাওয়া বাবর দিনে দ্বিতীয় ফিফটি নিয়ে আউট ৮১ রানে (১২৪ বলে ১০ চারে)।
দিন শেষে ক্রিজে মাসুদের সঙ্গী ছিলেন খুররম শেহজাদ (৮*)।