ম্যাচের তখনো প্রায় ১৬ ওভার বাকি। এই অবস্থাতেই স্বাগতিক দর্শকরা লাইনে দাঁড়ালেন স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। ৩২১ রানে লক্ষ্যে পাকিস্তান তখন ১৫৩ রান করেছে। ৩৪ ওভারে যে রান করেছে, বাকি ১৬ ওভারে তার চেয়েও ১৫ রান বেশি করবেন বাবর আজমরা- এমন বিশ্বাস ভক্তরাও রাখতে পারেনি।
৩২০ রানের লক্ষ্যে প্রথম দশ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২২ রান তোলে পাকিস্তান বুঝিয়ে দিয়েছিল এই ম্যাচ জেতার ইচ্ছে-ই যেন তাদের নেই। শুরুর দিকে চাপে পড়ে টেস্ট স্টাইলে রান তোলা পাকিস্তান কিউই বোলারদের সামনে শেষ পর্যন্ত ২৬০ রানে গুটিয়ে যায়। খুশদিল শাহ’র ৪৯ বলে ৬৯ রানের ইনিংসই পাকিস্তানের আড়াই শ রান পার করেছে।
চোটের কারণে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের সময় মাঠে না থাকায় আইসিসির নিয়মের বেড়াজালে ফখর জামান যখন ওপেন করতে পারেননি তখনই বড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান।
৩২০ রানের লক্ষ্যে নামার আগে পাকিস্তান জেনে যায় ওপেন করতে পারবেন না তাদের নিয়মিত ওপেনার ফখর জামান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ওভারে মাঠ ছাড়া ফখর ৩৫ ওভার পর্যন্ত মাঠেই ছিলেন না। তাতেই আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী পাকিস্তান ইনিংসের ২০ মিনিট পার হলেই শুধু নামা সম্ভব ছিল তাঁর পক্ষে।
ফখর জামানের পরিবর্তে ওপেনিংয়ে নামা সৌদ শাকিল সাবধানে ইনিংসের সূচনা করেন। তবে ধীরগতির ক্রিকেট খেলা শাকিল ইনিংসের চতুর্থ ওভারে উইলিয়াম ও’রোর্কের গতির কাছে ৬ রান করেই পরাস্ত হন, ফেরার আগে ১৯ বল খেলেন এই বাঁহাতি।
তবে তখনো ২০ মিনিট শেষ না হওয়ায় ক্রিজে নামেন অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। দলের হাল ধরার সময়ে স্বাগতিক অধিনায়ক যেন ভুলেই গেলেন এটি ওয়ানডে ম্যাচ।
ঠুকে ঠুকে ধীর গতির ক্রিকেট খেলা পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বাবর আজম সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলেও ওভারের বাকি সব বল ডট যাচ্ছিল। ধুঁকে ধুঁকে ১৩ বলে ৩ রান করা রিজওয়ান পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে গিয়েছিলেন হাত খুলে রান করতে। এর আগে ৩৭ বলে মাত্র ১৪ রান তুলেছে এ জুটি। কিন্তু পয়েন্ট অঞ্চলে লাফিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে ৩ রান করা রিজওয়ানকে বিদায় করেন ফিলিপস।
দলীয় ২২ রানে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তানের এরপর একমাত্র ভরসা ছিল ফখর জামান ও বাবর আজম। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে ফখর জামান নামলেও পায়ের চোটের জন্য বেশি সুবিধা করতে পারেননি।
বাবর আজমকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেওয়া ফখর ২১তম ওভারে মাইকেল ব্রেসওয়েলের স্পিনে ৪১ বলে ২৪ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন। দলীয় ৬৯ রানে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তানের হয়ে এরপর হাল ধরার চেষ্টা করেন দলটির সহঅধিনায়ক সালমান আলী আগা।
এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের আগ্রাসী মেজাজে ২৮তম ওভারে এসে দলীয় এক শ রান পার করে পাকিস্তান। তখন ক্রিজে ৭৪ বল খেলে ৪৪ রানে ব্যাট করছিলেন বাবর আজম।
দলীয় এক শ রান পার করার পর অনেকেই ভেবেছিলেন বাবর-সালমান জুটি রানের গতি বাড়াবে। তবে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে ৩১তম ওভারে ২৮ বলে ৪২ রান করা সালমান নাথান স্মিথের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
তখনও মাঠের দর্শকদের ভরসার প্রতীক হয়ে ক্রিজে ছিলেন বাবর আজম। কিন্তু ওভার প্রতি ১০ রানের বেশি প্রয়োজন হওয়ায় আগ্রাসী ব্যাটিং ছাড়া পাকিস্তানের কোনো উপায় ছিল না। সালমান ফিরে যাওয়ার তিন ওভারের মধ্যে বাবর আজম- তৈয়ব তাহিরও (১) প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।
দলীয় ১৫৩ রানে বাবর আজম যখন ফিরছিলেন তখন তাঁর নামের পাশে ৯০ বলে ৬৪ রান। বাবর ফিরে যাওয়ার পর মাঠের দর্শকরাও একে একে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। বের হবেন-ই না কেন তখন যে ১৬ ওভারে প্রয়োজন ১৬৮ রানের।
শেষ দিকে খুশদিল শাহ ঝোড়ো ইনিংস খেলার আভাস দিলেও সঙ্গ পাননি। শেষ পর্যন্ত ৪৯ বলে খুশদিলে ৬৯ রানের ইনিংস পাকিস্তানের কেবল ব্যবধানই কমিয়েছে। ৪৮তম ওভারে আরও ১৬ বল হাতে রেখে ২৬০ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ৬০ রানের জয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শুভ সূচনা করে নিউজিল্যান্ড।
এর আগে উইল ইয়াং ও টম লাথামের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৩২০ রানের সংগ্রহ পায় কিউইরা। ১১৮ রান করে অপরাজিত থাকেন লাথাম। ইয়াং খেলেন ১০৭ রানের ইনিংস।