নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েছেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। দেশটির ইতিহাসে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দুই রান সংগ্রাহক এ দুজন। এবং এখনো পর্যন্ত এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছা দেখাননি কেউ। বাবর সাবেক অধিনায়ক হলেও রিজওয়ান এখন সাদ বল অর্থাৎ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক।
কিন্তু নিউজিল্যান্ড সিরিজের টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পাননি কেউই। বদলে সালমান আগাকে অধিনায়ক করে পাঠানো হচ্ছে নিউজিল্যান্ডে।
এর আগে গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলেও ছিলেন না বাবর-রিজওয়ান। তখন ধারণা করা হয়েছিল দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বেঞ্চের শক্তি পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর টানা সিরিজ খেলার ধকল সামলানোর ব্যাপারও ছিল। কিন্তু ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্বে ভরাডুবির পর এ দুজনের দলে না থাকা ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয়।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চার দলের মধ্যে চতুর্থ হয়েছে পাকিস্তান। সে ধাক্কাই হয়তো পাকিস্তানকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। না হলে মাত্র ৩২ ও ৩০ বছর বয়সী রিজওয়ান ও বাবরের টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা নিতে বেশ ভাবতে হতো পিসিবিকে।
শুধু পরিসংখ্যান চিন্তা করলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাবর-রিজওয়ানের মতো সফল ব্যাটসম্যান খুব আছে। টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক বাবর (৪২২৩)। তাঁর চেয়ে মাত্র ৮ রান এগিয়ে থাকা রোহিত শর্মা অবসরে চলে গেছেন। রিজওয়ানের রানও সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি।
দুজনে এক সঙ্গে জুটি বেঁধে ৪৬.৪৭ গড়ে ৩ হাজার ৩০০ রান করেছেন। এই ফরম্যাটে অন্য কোনো জুটি একসঙ্গে ২২০০ রানও করতে পারেনি। দুজনে ১০টি শত রানের জুটি উপহার দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি সেঞ্চুরি জুটিতে ভারতকে ১০ উইকেটে হারানোর স্বাদ পেয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেটাই প্রথম ও একমাত্র জয় পাকিস্তানের।
বাবর-রিজওয়ান যেখানে ১০টি শতরানের জুটি উপহার দিয়েছে, সেখানে অন্য কোনো জুটি ৫টির বেশি সেঞ্চুরি করতে পারেনি। এ দুজন যে রান পান, সেটা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। কিন্তু রানটা কীভাবে তুলছেন, সেটা নিয়েই আলোচনা।
২০২২ সালের পর টি-টোয়েন্টিতে রিজওয়ানের চেয়ে বেশি মাত্র ৩ ব্যাটসম্যান রান করেছেন, কিন্তু সেটা এসেছে মাত্র ১২২.২৪ স্ট্রাইকরেটে। এই সময়ে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে তাঁর চেয়ে ধীরগতিতে রান করেছেন মাত্র একজন। বাবরের স্ট্রাইকরেট আরেকটু ভালো-১২৯.৩৭, কিন্তু সেটাও ধীরগতির তালিকার চারে আছে।
আর ভারতের কথা চিন্তা করা হয়, অবসর নেওয়া রোহিতের স্ট্রাইকরেট ছিল ১৪২.৮১। বর্তমানে যারা খেলছেন, সে তিনজন অভিষেক শর্মা (১৯৩.৮৪), ইয়াশাসভি জয়সোয়াল (১৬৪.৩১) ও সাঞ্জু স্যামসন (১৬২.০৯) বাবরদের নাগালের বাইরে। ১৩৯.২৭ স্ট্রাইকরেটের শুবমান গিল মূল স্কোয়াডে জায়গা পান না।
বাবর-রিজওয়ানদের ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে সমালোচনা সবসময়ই ছিল। তবে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হারের পর অবশেষে টনক নড়ে পাকিস্তানের। আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ব্যর্থতার পর তো সমালোচনার ঝড়ই বইছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে একটু সরিয়ে রাখতে চাইছে পাকিস্তান।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন অধিনায়ক সালমান আগাও বলেছেন এখন থেকে রান নয়, ম্যাচ জেতানোর ইচ্ছাটাই গুরুত্ব পাবে দলে, ‘আমাদের ইন্টেন্ট ও অ্যাপ্রোচে নজর দিতে হবে। আমাদের এসবে উন্নতি করতে হবে। আধুনিক ক্রিকেটে এসব গুরুত্বপূর্ণ। এটা তরুণ দল এবং আমরা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে চাই। আধুনিক ক্রিকেটে ঝুঁকিপূর্ণ ক্রিকেটই প্রয়োজন। এ পদ্ধতিতে ব্যর্থতা থাকবে, কিন্তু ক্রিকেটারদের সমর্থন দিতে হবে।’
তবে সালমান নিজে কতদিন টিকে থাকবেন, এ নিয়েও আগ্রহ আছে। ২০২৪ সাল থেকে এ নিয়ে চারজন অধিনায়ক টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব পেল পাকিস্তানে!