অনেক নাটকের পর আয়োজিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি গতকাল শেষ হয়ে গেল। টুর্নামেন্টটা ভালোভাবে শেষ যে হয়েছে, এ নিয়ে আয়োজক পাকিস্তানের স্বস্তি থাকতে পারে। তবে যেভাবে টুর্নামেন্টটা আয়োজিত হয়েছে, সেটাই পাকিস্তানের জন্য অস্বস্তির।
একে তো ভারতের আপত্তির কারণে ভারতের ম্যাচগুলো দুবাইয়ে রেখেই পাকিস্তানের ‘আয়োজনে’ হয়েছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, তারওপর কোনো ম্যাচ না জিতে গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়া পাকিস্তান ফাইনালটাও নিজেদের মাটিতে হতে দেখতে পারল না। ভারত যে ফাইনালে উঠেছে! ম্যাচটা তাই হয়েছে দুবাইয়ে। পাকিস্তানের জন্য সেখানেও থাকল অস্বস্তি, দর্শক হয়ে তারা দেখল দুবাইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের শিরোপার উৎসব।
তবে সেই শিরোপামঞ্চ ঘিরেও শেষ মুহূর্তে বড় একটা বিতর্ক হয়েছে, যাতে অপমানিত বোধ করারই কথা পাকিস্তানের। ভারত ফাইনালে ওঠায় ম্যাচটা দুবাইয়ে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাগজে-কলমে তো পাকিস্তানই আয়োজক। অথচ কাল ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে পাকিস্তানের কাউকেই ডাকা হয়নি!
এটা কীভাবে হলো, এ নিয়েও বিতর্ক যেন শেষ হচ্ছে না। পাকিস্তানের ক্রিকেটবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ক্রিকেট পাকিস্তানে এ নিয়ে এক ধরনের দাবি করা হচ্ছে, অন্যদিকে ভারতের ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ পাকিস্তানের কাউকে না রাখার একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে। আইসিসির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনো আসেনি।
গতকাল ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ছিলেন শুধু আইসিসির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক সচিব জয় শাহ, বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনি ও বর্তমান সচিব দেভজিত সাইকিয়া, আর নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক রজার টুজ। জাতীয়তার হিসাবে চারজনই ভারতীয়, একজন নিউজিল্যান্ডের।
পাকিস্তানের কাউকে কেন ডাকা হয়নি, এ নিয়ে গতকালই প্রশ্ন তুলেছেন পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে শোয়েব বলেছেন, ‘ভারত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতল, কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করলাম। পোডিয়ামে একজন পাকিস্তানিও ছিলেন না, অথচ পাকিস্তান এই টুর্নামেন্টের আয়োজক। বুঝতেই পারছি না কেন আমাদের দেশের প্রতিনিধি কেউ সেখানে ছিলেন না। আমার কাছে তো ব্যাপারটা ভাবনারও অতীত!’
ক্রিকেট পাকিস্তান লিখেছে, পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধি পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে না থাকায় খেপেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি), আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যাও চেয়েছে। পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি যে দুবাইয়ে ফাইনালে থাকতে পারবেন না, সেটি আইসিসিকে আগেভাগেই জানানো হয়েছিল। তবে তাঁর বদলে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে দুবাইয়ে যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পাকিস্তান অংশের টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর সামির আহমেদ সাইয়েদ যাবেন, সেটাও আইসিসিকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সামিরকে কাল পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ডাকা হয়নি। ক্রিকেট পাকিস্তানের দাবি, এর আগে কখনো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আয়োজক দেশের কাউকে না ডাকার ঘটনা ঘটেনি।
তবে ক্রিকবাজ লিখেছে, তারা জানতে পেরেছে যে পুরস্কার মঞ্চের প্রটোকলে শুধু বোর্ডের পরিচালক বা নির্বাচিত সদস্যকেই ডাকার বিধান ছিল, কোনো বোর্ডের কর্মীকে পুরস্কার মঞ্চে ডাকার বিধান ছিল না। পাকিস্তান অংশের টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর সামির পিসিবির নির্বাচিত কোনো সদস্য নন। এমনকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দুবাই অংশের ডিরেক্টর ও সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা আন্দ্রে রাসেল কাল মাঠে থাকলেও তাঁকেও একই কারণে ডাকা হয়নি বলে লিখেছে ক্রিকবাজ।