প্রথমে শোনা গেল, আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষেই অবসর নিয়ে নেবেন। ভারত ফাইনালে উঠতে উঠতে গুঞ্জন ছড়াল, অবসরে না গেলেও এই টুর্নামেন্টের পর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন। রোহিত শর্মা অধিনায়কত্ব নিয়ে কিছু বলেননি, তবে ভারতকে এবারের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতানো অধিনায়ক গতকাল ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করে দিলেন, এখনই ওয়ানডে থেকে অবসর নিচ্ছেন না।
‘এই ফরম্যাট থেকে অবসর নিচ্ছি না। এটা এখনই জানিয়ে দিচ্ছি, যাতে সামনের দিনগুলোতে গুজব ছড়ানো বন্ধ হয়’ – গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ৩৭ বছর বয়সী রোহিত।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী, সে প্রশ্নেও অবশ্য নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি রোহিত। প্রশ্নটা আসার অবশ্য কারণও আছে। গত বছর অধিনায়ক হিসেবে ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়ে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে নিয়েছেন। এরপর এবার ওয়ানডেতে ভারতকে জেতালেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে শিরোপা জেতার খুব কাছে গিয়েও অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফাইনালে হেরে যায় রোহিতের ভারত। পরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ আরও দুই বছর পর, ততদিনে রোহিতের বয়স হয়ে যাবে ৩৯।
রোহিতের উত্তর শুনে অবশ্য মনে হতে পারে, এখনই অতসব নিয়ে ভাবছেন না তিনি। মাত্রই শিরোপা জেতার পর এমন কিছু না ভাবার জন্য অবশ্য রোহিতকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। সাদা বলের ক্রিকেটে টানা দুটি আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতা, তা-ও দুই টুর্নামেন্টেই অপরাজিত থেকে – এমন কীর্তিরই রসে মজে ছিলেন রোহিত, ‘দেখা যাক। দল হিসেবে দুটি আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতা দারুণ দলগত অর্জন, অপরাজিত থেকেই জেতা আরও দারুণ ব্যাপার। খুব কম দলকেই দুটি টুর্নামেন্ট অপরাজিত থেকে জিততে দেখেছি। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল এটাই যে, আমরা এখানে এসে যেন প্রস্তুত থাকতে পারি এবং সব দলের বিপক্ষে লড়াই করতে পারি। কন্ডিশনটাকে কাজে লাগাতে পেরেছি আমরা, (শিরোপা) জিতেছি।’
এরপর ভবিষ্যৎ প্রশ্নে শুধু বললেন, ‘ভবিষ্যতের পরিকল্পনা…কোনো ভবিষ্যত পরিকল্পনা নেই। যা হচ্ছে, তা-ই হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের ব্যাটিং গভীরতা নিয়ে উচ্চকিত রোহিত প্রশংসায় ভাসিয়েছেন লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, রাভিন্দ্র জাদেজাদের। চার স্পিনার, বিশেষ করে টুর্নামেন্টে ভারতের তৃতীয় ম্যাচে প্রথম সুযোগ পাওয়ার পর একেবারে টুর্নামেন্ট রাঙিয়ে দেওয়া লেগ স্পিনার ভরুন চক্রবর্তীকেও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। এর মাঝে যখন প্রশ্ন হলো তাঁর ব্যাটিং নিয়ে, অধিনায়ক রোহিত সে উত্তরেও টেনে এনেছেন দলের ব্যাটসম্যানদের দক্ষতাকে।
গতকাল নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৫২ রানের লক্ষ্যে ভারত ৪ উইকেটে জিতলেও জয়টা একেবারে সহজে আসেনি। বারেবারে ধাক্কা দিয়ে ম্যাচে ফিরে আসা নিউজিল্যান্ডের বোলিংয়ের বিপক্ষে ৪৯ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছে ভারতকে। তবু সময় লাগলেও ভারতকে যে ইনিংসজুড়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি, সেটা ওপেনিংয়ে – বিশেষ করে পাওয়ার প্লে-তে – রোহিতের ঝোড়ো শুরুর কারণে।
২৭তম ওভারের প্রথম বলে দলকে ১২২ রানে রেখে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া রোহিত শেষ পর্যন্ত ৮৩ বলে ৭৬ রান করেছেন, তবে এর মধ্যে পাওয়ার প্লে-র দশ ওভারের মধ্যেই ৪০ বলে তুলে ফেলেন ৪৯ রান। যে কারণে পাওয়ার প্লে শেষে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৬৯। গিলের সঙ্গে তাঁর ওপেনিং জুটিতেই ১০৫ রান পেয়ে যায় ভারত। নিজের এভাবে হাত খুলে ব্যাটিং করতে পারার সাহসের পেছনে দলের ব্যাটিং গভীরতারই অবদান দেখেন ভারত অধিনায়ক, ‘ওটাই (ব্যাটিং গভীরতা) কাজটা অনেক সহজ করে দেয়, স্বাধীনতা দেয়। এ কারণেই বলছিলাম, আমরা চাইছিলাম আমাদের ব্যাটিংয়ের গভীরতা যেন যতটা সম্ভব বেশি থাকে। জাদেজার ৮ নম্বরে নামা শুরুতেই নতুন বলে আক্রমণাত্মক হওয়ার আত্মবিশ্বাস দেয়। তাতে কাজ হলে হলো, না হলেও সমস্যা নেই।’