পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটি ছিল সিরিজে টিকে থাকার। আর নিউজিল্যান্ডের কাছে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করার। এমন সমীকরণ সামনে রেখে মাউন্ট মঙ্গানুইতে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে ১১৫ রানের জয় পেয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। কিউইদের কাছে টি-টোয়েন্টিতে রানের ব্যবধানে এটাই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় পরাজয়।
আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা। কিন্তু ওই ম্যাচের ফলের আর পুনরাবৃত্তি হয়নি। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে টিম সেইফার্ট (২২ বলে ৪৪ রান) ও ফিন অ্যালেন (২০ বলে ৫০ রান) এবং শেষ দিকে ব্রেসওয়েলের (২৬ বলে ৪৬* রান) তাণ্ডবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২২০ রান তোলে কিউইরা।
যে উইকেটে পাকিস্তানের বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, সেই একই উইকেট যেন পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের সময় হয়ে উঠল দুর্বোধ্য। জটিল যে অঙ্কের সমাধান খুঁজতে গিয়ে একের পর এক উইকেট বিলিয়ে দিয়েন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। তাতে ইনিংসের ২২ বল বাকি থাকতে ১০৫ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। তাতে সিরিজের এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় নিউজিল্যান্ড।
ম্যাচটা যখন শুরু হয়, তার ৫-৬ মিনিট পরেই স্থানীয় সময়ে ইফতারের সময় হয়ে যায়। কিন্তু রাতের খাওয়ার সময় হওয়ার আগেই হোটেলে ফিরে যাওয়ার বন্দোবস্ত করে পাকিস্তান!
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সেইফার্ট ও অ্যালেন যেভাবে চার-ছক্কার প্রদর্শনী শুরু করেন, তাতে ৪ ওভার শেষ হওয়ার আগেই ৫০ রান হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের। পঞ্চম ওভারে হারিস রউফকে পুল করতে গিয়ে খুশদিল শাহর হাতে ধরা পড়েন সেইফার্ট। দলকে ৫৯ রানে রেখে ডানহাতি উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে ফেরেন, তখন তাঁর নামের পাশে ২২ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৪ রান।
সেইফার্ট বিদায় নিলেও তা খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি। তিনে নামা চাপম্যানকে নিয়ে রানের গতি একই রাখেন অ্যালেন। তবে ইনিংসের অষ্টম ওভারে রউফের দ্বিতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেন চাপম্যান (১৬ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ রান)।
দুই উইকেট বিদায় নিলেও ১০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ১৩৪ রান! কিউইদের স্কোর আজ কোথায় গিয়ে থামবে, এ আলোচনা শুরু হতেই পরের ওভারের প্রথম বলে আউট হন ফিন অ্যালেন। ১৯ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৫০ করার পরের বলে ক্যাচ দেন অ্যালেন।
এরপর হঠাৎ খেই হারায় নিউজিল্যান্ড। ১০ রানের ব্যবধানে আউট হন জিমি নিশাম (৩) আর মিচেল হে (৩)। তবে ড্যারিল মিচেল আর ব্রেসওয়েলের ষষ্ট উইকেট জুটিতে দ্রুতই নিজেদের পথ খুঁজে পায় স্বাগতিকরা। এ জুটিতে ৩০ বলে ৫৬ রান যোগ হয় নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে। মিচেল ২৩ বলে ২৯ রান করে আউট হলেও ব্রেসওয়েল ২৬ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৬ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২২১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারায় পাকিস্তান। উইল ও’রউর্কের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন মোহাম্মদ হারিস (২)। শুরুতে উইকেট পড়েছে, কোথায় একটু দেখে-শুনে খেলবেন, আরেক ওপেনার হাসান নেওয়াজ কি না প্রতি আক্রমণের চেষ্টা চালালেন। প্রতি বলেই মারমুখী ভঙ্গিতে ব্যাট চালাচ্ছিলেন তরুণ এ ওপেনার।
বলের অবস্থা না বুঝে ব্যাট চালানোর খেসারত দিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারে জ্যাকব ডাফির প্রথম বলে নেওয়াজের (১) ব্যাটের কোনায় লেগে সরাসরি ক্যাচ যায় হে-র হাতে। তখন পাকিস্তানের স্কোর ২ উইকেটে ৮ রান। স্কোরবোর্ডে আর ১ রান যোগ হতেই বিদায় নেন অধিনায়ক সালমান আগা (১)। রীতিমতো ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান।
এমন পরিস্থিতিতে ইরফান খান একপ্রান্তে ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু সেটা মোটেও যথেষ্ট ছিল না। শাদাব খান ১ রান করে আউট হলেন। এরপর ইরফান প্রতিআক্রমণে গেলেন। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ বলে দলকে ৪২ রানে রেখে বিদায় নিলেন তিনিও। সেটাও আবার ডাফির ফুল টসে মিড অফে ব্রেসওয়েলকে ক্যাচ শিখিয়ে। তাতে থেমে যায় ইরফানের ১৬ বলে ২৪ রানের ইনিংস।
দলের রান একই (৪২) থাকতে সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে আউট হন খুশদিল শাহ (৬)। ফোকসের বলটা বুঝতেই পারলেন না তিনি। ব্যাটের কোনায় লেগে বল ওপরের দিকে উঠল। স্লিপ থেকে কিছুটা দৌড়ে বল মুঠোবন্দি করেন নিশাম। স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ হতে এবার নিশামের হাতে ক্যাচে পরিণত হন আব্বাস আফ্রিদি।
পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে তখন ৪৩ রানে ৭ উইকেট। ৫০ রানের আগেই গুটিয়ে যায় কি না, এমন শঙ্কাও জাগে। তবে সে শঙ্কা দূর করেন আবদুল সামাদ। মাঝে শাহিন আফ্রিদি (৬) আউট হলেও অন্য প্রান্তে টিকে থাকেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত সামাদের ৩০ বলে ৪৪ রানের সুবাদেই ১০০ পেরিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস।