আইপিএল এবার নতুন বলের একটা নিয়ম রেখেছে। অবশ্য অনেক শর্ত বেঁধে দেওয়া আছে সে নিয়মে। রাতের ম্যাচে পরে বোলিং করা দল চাইলে ইনিংসের দশম ওভারের পর যেকোনো সময়ে একবার বল বদলাতে পারবে। রাতে শিশিরের প্রভাব কাটাতেই এই নিয়ম চালু করেছে আইপিএল, যে নিয়মটা গতকাল দিল্লি ক্যাপিট্যালসের বিপক্ষে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।
আইপিএলের পথ ধরে এবার কি বল নিয়ে নিয়মে বদল আনতে চাইছে আইসিসিও? ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে তেমনই আভাস দেওয়া আছে। ওয়ানডেতে দুই প্রান্ত থেকে দুই বল নিয়ে খেলার নিয়ম আইসিসি চালু করেছিল ২০১১ সালের অক্টোবরে, যা ক্রিকেট খেলাটাকে বোলারদের জন্য আরও কঠিন আর ব্যাটসম্যানদের জন্য বন্ধুসুলভ বানিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ অনেকের। প্রায় ১৪ বছর পর বিতর্কিত নিয়মটা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে আইসিসি।
ক্রিকইনফোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জিম্বাবুয়ের হারারেতে এই সপ্তাহে আইসিসির সভায় এ নিয়ে একটা প্রস্তাব এসেছে। ৩৫তম ওভার থেকে দুই বলের মধ্যে যেকোনো একটি দিয়ে বাকি ইনিংস চালিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে ইনিংসের শেষ প্রান্তে বোলারদের রিভার্স সুইং পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে, ক্রিকেটের আইনের কারণে বল-ব্যাটের লড়াইয়ে সুবিধার ব্যবধানটা কিছুটা হলেও কমবে। তবে এ ব্যাপারে আইসিসির সদস্য বোর্ডগুলোকে ভাবতে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত কী আসে সেটা বোঝা যাবে আগামী জুলাইয়ে আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায়।
প্রস্তাবটা এসেছে ভারতের কিংবদন্তি অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বাধীন আইসিসির ছেলেদের ক্রিকেট কমিটির দিক থেকে। প্রস্তাবটা এই - দুই প্রান্তে দুই নতুন বল দিয়েই ইনিংস শুরু হবে। তবে ৩৪তম ওভারের পর – অর্থাৎ, দুটি বলই ১৭ ওভার পুরোনো হয়ে যাওয়ার পর ফিল্ডিং করা দল নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো একটি বল বেছে নেবে, যা দিয়ে ইনিংসের বাকি অংশের খেলা চলবে। অন্য যে বলটি থাকবে, সেটিকে প্রয়োজন পড়লে কাজে লাগানোর জন্য ‘স্পেয়ার বল’ হিসেবে কাজে লাগানো হবে।
ক্রিকেট কমিটির প্রস্তাবে প্রথমে ২৫তম ওভার থেকেই বল বদলের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ক্রিকইনফো লিখেছে, সেই প্রস্তাব কমিটির মধ্যেই খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কমিটির মনে হয়েছে, ১২ ওভারের বদলে দুটি বলই অন্তত ১৭ ওভার পুরোনো হলে তারপর বল দুটির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেওয়া আরও বেশি যুক্তিযুক্ত হবে।
এই প্রস্তাব নিয়ে নিজেদের মত বোর্ডগুলো এই মাস শেষ হতে হতেই জানিয়ে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি বোর্ডগুলোর রায়ে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট বেশি আসে, সে ক্ষেত্রে আগামী জুলাইয়ে আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায়ই এই প্রস্তাবটাকে খেলার আইনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া যাবে বলে জানাচ্ছে ক্রিকইনফো। খেলা পরিচালনার আইন সম্পর্কিত প্রস্তাব হওয়ায় এ ব্যাপারে আইসিসির বোর্ডের অনুমোদনের দরকার পড়বে না।
দুই প্রান্তেই দুটি নতুন বলের নিয়মটা ১৪ বছর আগে চালু হলেও এর আগেও ক্রিকেটে দুই বলের ব্যবহার দেখা গেছে। উদাহরণ হিসেবে ১৯৯২ বিশ্বকাপের কথা বলা যায়, সেবার দুই প্রান্তে দুই নতুন বল দিয়ে খেলা হতো। ওয়ানডে ক্রিকেটে বল নিয়ে নিয়মের পরীক্ষা-নিরীক্ষার নতুন সংস্করণ ছিল আর কী সেটি! একটা লম্বা সময় পর্যন্ত তো ওয়ানডে ক্রিকেটও লাল বলেই খেলা হতো, সে বল অনায়াসেই ৫০ ওভার (বা আগে যখন ৬০ ওভারের খেলা হতো, তখন ৬০ ওভার) টিকে যেত। কিন্তু সত্তরের দশকে আলোচিত ক্যারি প্যাকার সিরিজে সাদা বল দিয়ে ওয়ানডে খেলা শুরুর পর থেকেই বল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার শুরু। কারণ সাদা বলের ক্ষেত্রে একটা বল দিয়েই দুই প্রান্তে খেলা হলে সেই বল ৫০ ওভার পর্যন্ত যেতে যেতে রঙ হারিয়ে ফেলত। ১৯৯২ বিশ্বকাপে তাই দুই প্রান্তে দুই বল দিয়ে খেলা হতো। কিন্তু এর আগে-পরে আরও কয়েকবার নিয়মে বদল আসে। ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আইসিসির নিয়ম ছিল, ৩৪তম ওভারের পর বল বদলাতেই হবে। সে ক্ষেত্রে যে বলটি দিয়ে ৩৪ ওভার পর্যন্ত খেলা হতো, তেমনই একটি ‘ব্যবহৃত বল’ বেছে নিতেন আম্পায়ার, তবে বদলের পর পাওয়া বলটির রঙ আগের ৩৪ ওভারের বলের চেয়ে উজ্জ্বল হতো আর কী!
এখন ৩৪তম ওভারের পর দুই বলের যেকোনো একটি দিয়ে বাকি ইনিংস খেলার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে বোর্ডগুলোর সিদ্ধান্তের পর রায় কী আসে, সেটির অপেক্ষায় আরও মাস তিনেক বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই।
বল নিয়ে আইনের বদল ছাড়াও হারারেতে আইসিসির সভায় আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। টেস্টে বোলিং দল দুই ওভারের মাঝে যাতে বেশি বিরতি নিতে না পারে, সে জন্য দুই ওভারের মাঝে ৬০ সেকেন্ডের ‘স্টপ ক্লক’ চালু করার ব্যাপারেও বোর্ডগুলোকে ভেবে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়েছে। স্লো ওভার রেইটের ঝামেলা এড়াতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে গত বছর থেকেই দুই ওভারের মাঝে এই ‘৬০ সেকেন্ড স্টপ ক্লক’ নিয়ম চালু করা হয়েছে। কোনো দল ইনিংসে দুবারের বেশি এই সময়ের চেয়ে বেশি নিলে শাস্তি হিসেবে তাদের পাঁচ রান জরিমানা করা হয়।
এর বাইরে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে ওয়ানডের বদলে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আয়োজনের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যদিও সদস্যদের মধ্যে এর পক্ষে বা বিপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত পাওয়া যায়নি। যেহেতু এই নিয়মের ক্ষেত্রে ‘প্লেয়িং কন্ডিশনে’র বাইরেও আর্থিক হিসাবনিকাশও জড়িত, তাই এই নিয়মের বদলাতে গেলে আইসিসির বোর্ডের অনুমোদন লাগবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ‘বোনাস পয়েন্ট’ চালু করার নিয়ম নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে হিসাবনিকাশ অনেক জটিল হয়ে যাবে বলে মত এসেছে।