গত বছরের জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের সময় দেশের বাইরে ছিলেন সাকিব আল হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট ও কানাডায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে অংশ নিয়েছিলেন। দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে সরব থাকলেও সাকিব ছিলেন বিপরীত মেরুতে।
উল্টো আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, ২ আগস্ট সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির তাঁর ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে একটি পারিবারিক মুহূর্তের ছবি শেয়ার করেন। ঘোরাঘুরির ছবির ক্যাপশনে শিশির লিখেছিলেন, ‘আ ওয়েল স্পেন্ট ডে’ আর লোকেশন ছিল টরন্টো। শিক্ষার্থী-সাধারণ জনতার রক্ত ঝরার সময়ে সাকিবের কানাডায় এমন ঘোরাঘুরির ছবি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
ঘটনার এতদিন পর এসে সেই ছবি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাকিব। দেশীয় ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ডেইলি সানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন তিনি। পাশাপাশি কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে দর্শকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
ভাইরাল ওই ছবি শেয়ার প্রসঙ্গে সাকিব বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, আমি তখন বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি) খেলেছি, তারপর (খেলেছি) কানাডায়। ওই ছবিটি কানাডায় তোলা হয়েছিল। আমি নিজে এটি পোস্ট করিনি। তবুও, এর দায়ভার আমি নিচ্ছি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘এটা একটা পূর্বপরিকল্পিত পারিবারিক ভ্রমণ ছিল। এখন বুঝতে পারছি, হ্যাঁ, একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে আমার আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। আমি এটা মেনে নিচ্ছি। তবে আমার মনোযোগ সব সময় ক্রিকেটেই ছিল—সেটা সংসদ সদস্য হওয়ার আগে এবং পরেও। আমাকে কখনো রাজনীতিতে জড়াতে বলা হয়নি। আমাকে সব সময় বলা হয়েছে, “শুধু ক্রিকেটটা খেলো।” তাই আমি ওইদিকেই মনোযোগ দিয়েছি।’
তা ওই ছবিটা নিয়ে এমন বিতর্ক তৈরি হবে, এমনটা কি ভেবেছিলেন - এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, ওটা যে এতটা ছড়িয়ে পড়বে, সেটা আমি ভাবিনি। প্রতিক্রিয়া শুরু হওয়ার পর, আমি বুঝতে পেরেছিলাম, পরিস্থিতি কতটা জটিল হয়ে পড়েছে। আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আমাকে বলেছে, ওই সময়ে ওই ছবি দেখে কষ্ট পেয়েছে। এখন বুঝতে পারছি, ওটা একটা ভুল ছিল। অন্য অনেকেও এমন অনেক জিনিস পোস্ট করলেও, আমারটা বেশি মনোযোগ পেয়েছে। এটা হয়তো আমি বলেই হয়েছে। তবে আমার আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’
শুধু ওই ছবিই নয়, এর দিন কয়েক পর কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার সময় এক দর্শকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় সাকিবের। সে প্রসঙ্গে সাকিব বলেছেন, ‘আমার মনে হয় ওই লোকটা আমাকে উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছিল। অথবা সে ছিল খুবই হতাশাগ্রস্ত। সে বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছিল, কেন আমি কিছু করছি না। এক পর্যায়ে আমি তাঁকে পাল্টা জিজ্ঞেস করি, “ভাই, আপনি কী করেছেন?” এবং সেখানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।’
ওই ঘটনা প্রসঙ্গে সাকিব আরও বলেন, ‘দেখুন, আমি কিছু করি বা না করি, মানুষ আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই। কিন্তু কেউ যখন আমাকে বারবার একই প্রশ্ন করতে থাকে যায়, আমারও কি এর জবাব দেওয়ার অধিকার নেই?’
দেশের ওই পরিস্থিতিতে কিছু করতে যেহেতু পারছিলেন না, দূরে থেকে ফাঁকা বুলি দেওয়াকে কাজের কাজ মনে হয়নি বলে জানালেন সাকিব। তাঁর আসলে কী করা উচিত, সে ব্যাপারেও ওই দর্শকের কাছে নাকি পরামর্শ চেয়েছিলেন। সাকিবের ভাষায়, ‘আমি তাঁকে এবং সেখানে থাকা অন্যদের জিজ্ঞাসা করেছি, আমি কী করেছি। আমি তো ওই সময়ের ঘটনাগুলো এড়িয়ে যাচ্ছিলাম না। আমি শুধু জানতাম না কী করতে হবে কিংবা কোনটা কার্যকর হবে।’
সাকিব আরও বলেছেন, ‘সরকার এবং অন্যরা আমাকে কিছু পোস্ট করতে বলেছিল। কিন্তু সেটাতে কী লাভ হতো? সেটা কি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারত? ওটা কি আগুনে জ্বালানি বা ঘি ঢালত? আমি সব সময় দায়িত্ব নিয়ে কাজ করায় বিশ্বাসী। আমি যদি কাজ দিয়ে সরাসরি কোনো পরিবর্তন আনতে না পারি, তাহলে মুখে বড় বড় কথা বলে লাভ কি?’