লম্বা সময় ধরে ক্রিকেটের বাইরে সাকিব আল হাসান। দেশের হয়ে শেষ টেস্ট খেলতে না পারা, দেশে ফিরতে চেয়েও আসতে না পারা - অনেক কিছু ঘটে গেলেও এসব কিছু নিয়ে এতদিন মুখ খুলেননি সাকিব। অবশেষে নিজেকে নিয়ে সব আলোচনা-সমালোচনার জবাব এবং নিজের বর্তমান অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডেইলি সান-এ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার।
রাজনীতিতে যোগদানের পর সাকিবকে অনেকেই ভিন্ন নজরে দেখছেন। কিন্তু সাকিব স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁকে ১৮ বছরের ক্যারিয়ার নাকি ৬ মাসের রাজনীতি দিয়ে বিবেচনা করা হবে সেটি সম্পূর্ণ সমর্থকদের ইচ্ছা। সাক্ষাৎকারে সাকিব আরও জানিয়েছেন, সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে যখন খেলতে চেয়েও খেলতে পারেননি, তখনই তাঁর মনে হয়েছে সব শেষ।
কখন বুঝতে পারলেন আপনি আর খেলতে পারবেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব সেই সাউথ আফ্রিকা টেস্ট না খেলতে পারার বিষয়টি সামনে এনে বলেন, ‘যখন বুঝলাম আমি এত চাপ নিয়ে আর খেলতে পারব না, তখনই শেষ মনে হয়েছে। বিষয়টা এমন না যে আমি আর দেশের জন্য খেলতে চাই না। আমি এখনও বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই এবং এই ইচ্ছাটা সব সময়ই থাকবে। আমি এই ব্যাপারে বোর্ড সভাপতি থেকে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি।’
সুযোগ পেলে সাকিব বাংলাদেশের হয়ে আরও এক বছর খেলে যেতে চান, ‘হ্যাঁ, আমি এমপি (সংসদ সদস্য) ছিলাম। কিন্তু এখন তো আর নেই এবং আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পদেও নেই। আমি ১৮-২০ বছর (ক্রিকেটীয় জীবন) ধরে যা করেছি তা যদি এখন থামিয়ে দেওয়া হয়, সেটি কি আপত্তিকর নয়? আমি এখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলে ভালোভাবে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ করতে চাই। যদি সুযোগ থাকে আমি এক সিরিজ, দুই সিরিজ অথবা আরও এক বছর খেলব ধরে পরিকল্পনা সাজাতে চাই।’
বাংলাদেশের জার্সি আবার গায়ে জড়ানোর জন্য এখনও চেষ্টা করছেন জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘দেশের হয়ে খেলা আমার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা এবং আমি এটার জন্য সব কিছু করতে রাজি আছি। এটাই আমার স্বপ্ন যার জন্য আমি কাজ করছি এবং সেটা পূরণ করার জন্য আমি সব কিছু করছি- ক্রীড়া উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা এবং বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলছি।’
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দলে সাকিবের নামও ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তার কারণে সাকিব দেশে ফিরেননি। বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা না পাওয়াটা হতাশার কি না - এ ব্যাপারে সাকিব বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই এবং আমার কোন ক্ষোভও নেই। প্রত্যেকেরই নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আছে এবং বিষয়গুলোকে আপনি ইতিবাচকভাবে দেখতে ইচ্ছুক কি না, নাকি জটিল করে তুলতে চান তা আপনার ওপর নির্ভর করে।’
ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের চেয়ে রাজনীতির ৬ মাস সমর্থকরা বড় করে দেখছেন কি না এই ব্যাপারে সাকিব বলেন, ‘আপনি আমাকে গত ১৮ বছর নাকি ৬ মাস দিয়ে বিচার করবেন তা আপনাদের ইচ্ছা। আপনি যদি একদিক থেকে দেখেন, তাহলে হয়তো ভিন্ন মনে হতে পারে, কিন্তু যদি আপনি এসব কিছু নিরপেক্ষভাবে দেখেন, তাহলে সবই বুঝতে পারবেন। আমি মনে করি বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়াটা আমার প্রাপ্য এবং বেশিরভাগ মানুষই চান যে আমি দেশের হয়ে খেলে অবসর নিই এবং আরও কিছু সময় ধরে খেলি। আমি বিশ্বাস করি আমি আরও এক বা দুই বছর খেলতে পারব। যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু ইচ্ছা থাকলেই তা ঠিক করা যেতে পারে এবং সেই সদিচ্ছা অবশ্যই উপর থেকে আসতে হবে।’
বাংলাদেশের হয়ে আবার খেলার জন্য সাকিব নিজের নিরাপত্তা চান, ‘আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আমি ফিরতে রাজি আছি। আমার অনেক খারাপ লেগেছিল যখন দেখলাম আমার বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়েছে এবং পরে আমি জানতে পারি যে মামলা করা ব্যক্তিও জানেন না যে আমার নাম কীভাবে এতে এসেছিল। আমি অবাক হয়েছি যে, কিছু লোক কতদূর যেতে পারে। আমার কাছে প্রমাণ আছে যে আমি নির্দোষ ছিলাম, দুনিয়াটাকে সহজ এবং সরল ভেবেছিলাম, কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি যে এসব কতটা জটিল এবং খারাপ হতে পারে।’