মেয়েদের বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আগামীকাল বাংলাদেশের বিপক্ষে নামবে পাকিস্তানের মেয়েরা, তবে এ ম্যাচ নিয়ে পাকিস্তানের আর তেমন চিন্তার কিছু নেই। লাহোরে গতকাল থাইল্যান্ডকে ৬৭ রানে হারিয়ে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের এ জয়ে কারও যদি কপালে হাত দেওয়ার মতো অবস্থা হয়, সেটি ভারতই! মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপটা যে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হতে যাচ্ছে ভারতে!
একদিক থেকে দেখলে, ভারতের কারণে কদিন আগে ছেলেদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যে ঝামেলায় পড়েছিল টুর্নামেন্টের আয়োজক পাকিস্তান, এবার মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কারণে ঠিক একই ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে আয়োজক ভারত।
পাকিস্তান বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে এটাও নিশ্চিত হয়ে গেল, ভারতকে এখন নিজ মাটিতে হতে যাওয়া মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচ অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হবে। যে-সে ম্যাচ নয়, ভারতেরই একটা ম্যাচ আয়োজিত হতে ভারতের বাইরে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে!
কেন এমন হিসাব আসছে? পাকিস্তানের মাটিতে গত মার্চে ছেলেদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দল পাঠায়নি ভারত, তাদের জেদের কারণে পরে টুর্নামেন্টটা ‘হাইব্রিড মডেলে’ আয়োজন করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান ও আইসিসি। যেমনটা হয়েছিল পাকিস্তানের আয়োজনে হওয়া ২০২৩ এশিয়া কাপেও। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের সব ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে দুবাইয়ে, ফলে গ্রুপ পর্বে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি খেলতেও পাকিস্তান দলকে যেতে হয়েছে দুবাই।
তবে বছর দেড়েক আগের এশিয়া কাপের ঝক্কির পর এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের নাটকের পর পাকিস্তান আর সহজে ছাড়েনি। সেবার এশিয়া কাপ ওভাবে আয়োজনের পরও ভারতের মাটিতে হওয়া ছেলেদের বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান দল ভারতে গিয়েছিল। কিন্তু এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত তাদের দল পাকিস্তানে পাঠাতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত হাইব্রিড মডেলে টুর্নামেন্ট আয়োজনে বাধ্য হয় পাকিস্তান, তারা আইসিসির মাধ্যমে জোরাল একটা শর্তে ভারতের সই নিয়েই রাজি হয়েছে। শর্তটা এই, ২০২৭ পর্যন্ত পাকিস্তানের মাটিতে আইসিসির ইভেন্টগুলোতে ভারত যেমন দল পাঠাবে না, তেমনি ভারতের মাটিতে আইসিসির ইভেন্টগুলোতে পাকিস্তানও তাদের দল পাঠাবে না! অর্থাৎ, ভারত ও পাকিস্তানের মাটিতে সব টুর্নামেন্টই হবে হাইব্রিড মডেলে।
ফলে, এবার মেয়েদের বিশ্বকাপে পাকিস্তান জায়গা নিশ্চিত করতেই এটাও নিশ্চিত হয়ে গেল যে, ভারতকে এখন হাইব্রিড মডেলে যেতে হবে। পাকিস্তানের ম্যাচগুলো ভারতের বাইরে নিরপেক্ষ কোনো ভেন্যুতে আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর মেয়েদের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে যেহেতু একটি দল বাকি সব দলের সঙ্গেই খেলবে, তার মানে ভারত ও পাকিস্তান একটা ম্যাচে মুখোমুখি হবে। ফলে সে ম্যাচটিও ভারতের বাইরে নিরপেক্ষ সেই ভেন্যুতে গিয়েই খেলতে হবে ভারতের দলকে! পাকিস্তান যদি টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল-ফাইনালে উঠে যায়, সে ম্যাচগুলোও হবে ভারতের বাইরে!
নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে কোন দেশকে বেছে নেওয়া হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে হাইব্রিড মডেলে যেতে হওয়ায় ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কপালে হাত এ কারণে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে টুর্নামেন্টের বাকি সব দলকেই যেহেতু নিরপেক্ষ ভেন্যুতে যেতে হবে, সে ক্ষেত্রে টুর্নামেন্টের লজিস্টিক্যাল আয়োজনে জিলাপির প্যাঁচ লেগে যাবে। সব দলের ভ্রমণ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে-পরের বিশ্রামে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হওয়া মানে টুর্নামেন্টের সূচি ঠিক করতে আইসিসিরও ঘাম ঝরবে। পাশাপাশি নিজ দেশের টুর্নামেন্টে অন্য কোনো দেশকে সঙ্গে নেওয়া মানে তো টুর্নামেন্ট থেকে প্রাপ্য লাভের পরিমাণেও ভাগাভাগি!
প্রতিবেশি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনে আরেকবার ক্রিকেটকে ভুগতে হবে আর কী!