বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে গতকাল তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা মুমিনুল হক বলেছিলেন, বাংলাদেশ ৩০০ রানের লক্ষ্য দিতে চায় জিম্বাবুয়েকে। তা না হলেও অন্তত ২৭০-২৮০। আজ চতুর্থ দিন সকালে ব্যাটিং কঠিন হবে, তৃতীয় দিন শেষে টিকে থাকা শান্ত-জাকেরদের ক্রিজে টিকে থাকতে হবে, তাহলে পরের দিকে একটা সময় খেলাটা ‘কিছুটা ছাড়বে’, তখন বাংলাদেশকে খেলাটা ধরতে হবে…এসবই বাংলাদেশের পরিকল্পনায় ছিল বলে গতকাল জানিয়েছিলেন মুমিনুল।
আর জিম্বাবুয়ের প্রতিনিধি ব্লেসিং মুজারাবানি বলেছিলেন, লক্ষ্যটা ২০০ রানের নিচেই রাখতে চাইবেন তাঁরা।
বৃষ্টির কারণে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর খেলা শুরু হতে দেখা চতুর্থ দিনে আজ বাংলাদেশ যেমন ব্যাটিং করল, তাতে মনে হচ্ছে, ‘অতিথিপরায়ন’ বাংলাদেশ অতিথি জিম্বাবুয়ের চাওয়াটাই পূরণ করেছে! এমনই ব্যাটিং করেছে যে, ম্যাচটার সব হিসাব-নিকাশ চারদিনের মধ্যেই শেষ করার যেন ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ! বৃষ্টির কারণে এক ঘণ্টা হাপিশ হতে দেখা সকালের সেশন শেষ হওয়ার আগেই ৬ উইকেট হাতে নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ অলআউট!
শান্ত দিনের দ্বিতীয় বলেই অযথা শট খেলতে গিয়ে আউট, মুশফিকুর রহিমের মতোই টেস্টে দুই ইনিংসেই মিরাজ ক্রিজে এসে ‘উপস্থিত’ বলেই আবার চলে গেলেন, বাকিরা তো টেল-এন্ডারই! এর মধ্যে হাসান মাহমুদ কিছুটা পাল্টা লড়াই করেছেন, তাঁকে নিয়ে লড়ে গেছেন জাকের আলী অনিক। গতকালই বাংলাদেশের ৪ উইকেটের ৩টি নেওয়া মুজারাবানি আজ আরও তিন উইকেট নিয়েছেন, তাঁর সামনে বাংলাদেশের যা জাকেরই যেন হালে পেলেন পানি।
শেষ পর্যন্ত ৫৮ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন অনিক, বাংলাদেশ অলআউট হলো ২৫৫ রানে। জিম্বাবুয়ে টেস্ট জিততে লক্ষ্য পেল মাত্র ১৭৪ রানের। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে লাঞ্চ হয়ে গেছে, তার আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বিনা উইকেটে ৪ রান করেছে জিম্বাবুয়ে।
গতকাল ৬০ রান নিয়ে দিন শেষ করা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ওপর বড় ভরসা ছিল বাংলাদেশের। হিসাবটা সহজ, ক্রিজে দিন শুরু করা দুই ব্যাটসম্যান শান্ত আর অনিকের পর স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে তো যা মেহেদি হাসান মিরাজই ছিলেন। সে কারণে গতকাল ৩৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিন শেষ করা শান্ত-অনিক আজ বাংলাদেশকে সকালে কতটা ভালো শুরু এনে দিতে পারেন, তার ওপর বাংলাদেশের পরিকল্পনা নির্ভর করছিল।
তা কাল সন্ধ্যার পর থেকে বাংলাদেশ দল যা-ই পরিকল্পনা করে থাকুক, সকালের দ্বিতীয় বলেই বাংলাদেশকে ‘প্ল্যান বি’ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করলেন শান্ত! মুজারাবানির শর্ট বলে পুল করতে গেলেন, ফাইন লেগে ক্যাচ! গতকাল ৬০ রান নিয়ে দিন শেষ করেছিলেন, আজ আর স্কোরারকে রানের খাতায় কাটাকুটি করার কষ্ট দিলেন না শান্ত।
‘প্ল্যান বি’ – শান্ত গেছেন, এখন জাকের আর মিরাজ মিলে যদি দেখেশুনে সকালের প্রথম ঘণ্টাটা পার করে দিতে পারেন! এমনই তো হওয়ার কথা পরিকল্পনা। মিরাজ ওভার চারেক পর নিশ্চিত করলেন, বাংলাদেশকে ‘প্ল্যান-সি’তে যেতে হচ্ছে। এক্সট্রা পেইসের সামনে মিরাজের পায়ের নড়নচড়ন কেমন হয়, সেটার প্রমাণ আরেকবার রেখে মুজারাবানির হঠাৎ বাড়তি পেস ও বাউন্স পাওয়া বলে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে খেলে ক্যাচ আউট মিরাজ (১১) – মুজারাবানির পঞ্চম শিকার। বাংলাদেশের রান তখন মাত্র ২১০, লিড ১২৮।
‘প্ল্যান সি’ আর কী-ই বা হতে পারে! জাকের আলী অনিক যদি শেষদিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কিছু করতে পারেন, যদি শেষদিকে তাইজুল-হাসান মাহমুদরা কিছুক্ষণ টিকতে পারেন! গতকাল মুমিনুলও তাইজুল-হাসানদের ওপর ভরসার কথা বলেছিলেন।
তাইজুল টিকলেন না বেশিক্ষণ, ১ রান করেই আউট। হাসান মাহমুদ প্রথম ইনিংসের মতো এবারও অনিকের সঙ্গে মিলে একটা জুটি গড়লেন। তবে এই জুটিতে হাসানের ওপর কি একটু বেশিই ভরসা করতে শুরু করে দিয়েছিলেন অনিক? হাসানকে স্ট্রাইক দিতে দিতে মাঝে মাঝে এমনই অবস্থা হচ্ছিল যে, হাসান ওভারের ৫ বল খেলছেন, ১ বল অনিক!
জুটিতে ৩৫ রান এলো। তবে হাসান শেষ পর্যন্ত ১২ রান করে যখন মাসাকাদজার বলে হঠাৎ আগ্রাসী শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হয়ে গেলেন, বাংলাদেশ পড়ল বিপদে। দলকে ২৪৮ রানে রেখে হাসান আউট, একই স্কোরে রেখে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে পরের বলেই আউট খালেদ আহমেদও। তাতে জাকের আলী অনিকের বিপদটা বাড়ল, অন্য প্রান্তে তো আর নাহিদ রানার ব্যাটিংয়ের ওপর সেভাবে ভরসা রাখা যায় না! এতক্ষণ হাসান মাহমুদের ওপর বেশি ভরসা করার মাশুল গুণলেন অতি-আগ্রাসী হতে গিয়ে। ফল? এলোপাতাড়ি মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট। তাঁর ফিফটিই (৫৮) হলো শুধু, বাংলাদেশ ২৫৫ রানের বেশি আর যেতে পারল না।